দৈনিক খবর

শুনে শুনে ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করেন দৃষ্টিশক্তিহীন ইকবাল

শিশুকাল থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন অন্ধ ইকবাল হোসেন। তার বয়স যখন মাত্র সাড়ে চার, তখন টাইফয়েড জ্বরের প্রভাবেই দুচোখের দৃষ্টি হারান তিনি। তবে এছাড়াও তার আসল পরিচয় হলো তিনি কোরআনের হাফেজ।

ইকবাল সহপাঠী আর শিক্ষকের কাছে শুনে শুনে ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। হাফেজ ইকবাল হোসেনে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ গ্রামের বাসিন্দা।

তবে দৃষ্টিশক্তিহীনতায় থেমে থাকেনি তার জীবন। বরং ছোটবেলা থেকে পরিবারে অসচ্ছলতা দূর করতে অন্ধত্বকে জয় করে হাল ধরেছেন সংসারের। স্বনির্ভর হতে বাড়ির পাশে করেছেন একটি চায়ের দোকান। এছাড়া যুক্ত রয়েছেন সমাজিক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার কাজে। শ্রোতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন বিবিসি বাংলা ও বাংলাদেশ বেতার থেকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিজ এলাকায় বেশ পরিচিতি ইকবাল। এ গ্রামের শিক্ষা বিস্তারে তার বেশ অবদান রয়েছে। আশেপাশের এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ‘মুরাদ বেতার সংঘ’ নামের একটি সংগঠন করেছেন তিনি।

সংগঠনের পক্ষ থেকে অসচ্ছল ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছেন তিনি। এছাড়া প্রতি বছর এই গ্রামে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন তার গড়া সংগঠনটি।

হাফেজ ইকবাল হোসেন জানান, জ্বরে দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর সংগ্রাম করার ইচ্ছে নিয়ে মাদরাসায় ভর্তি হই। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও মানুষ ইচ্ছে করলে সবকিছু পারে। আমি আমার এলাকার মানুষদের ধন্যবাদ জানাই যারা আমার চলার পথে সাহস দিয়ে সবসময় পাশে থেকেছেন।

আবদুল হক নামের নাগাইশ গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান , সাড়ে ৪ বছর বয়সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চোখের দৃষ্টি হারায় ইকবাল। নাইঘর গ্রামে হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। বন্ধুদের কাছে শুনে শুনে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। ছোটবেলা থেকে ছেলেটা সংগ্রাম করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা জানান, হাফেজ ইকবাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। তবে আপনার (সংবাদকর্মীর) কাছ থেকে যা শুনছি নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি, হাফেজ ইকবালের জন্য যা যা করার সব করা হবে।

Related Articles

Back to top button