দৈনিক খবর

দীর্ঘ ৩২ বছর বছর পর পরিবারের কাছে ফিরলেন নিখোঁজ সুফিয়া

সুফিয়া বেগম। ৬ বছর বয়সে হারিয়ে যান তিনি। প্রায় ৩২ বছর ধরে পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি পরিবার। অবশেষে খোঁজ মিলেছে আরজে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।

জানা যায়, মাত্র ৫ বছর বয়সে সুফিয়ার মা মারা যান।তারা চার বোন, এক ভাই ছিলো। মা মারা যাওয়ার পরপরই আমাদের বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। তখন আমরা ছোট তিন বোন আমাদের বড় বোনের শশুর বাড়ি চলে যাই।

এক বছর পর সেখান থেকে আমাদের চাচা সমিদ ব্যাপারী ঢাকাতে একটি বাসায় কাজে লাগিয়ে দেয়। ঢাকা যাওয়ার সময় যতটা মনে পরে আমরা লঞ্চে গিয়েছি।

কিছুদিন পর চাচা জানায়, আমার বাবাও মারা গেছেন। যেই বাসায় কাজ করতাম তারা আমাকে বাড়িতে যেতে দেয়নি। তখন আমি চাচাকে বলি আমি এখানে কাজ করবো না। কিছুদিন পর চাচা আমাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। কয়েকদিন পর গ্রামের মেম্বারের মেয়ে পারুল আক্তার তার বাসা ঢাকা মোহাম্মদপুরে, পারুল তার বাসায় আমাকে কাজের জন্য নিয়ে যায়।

পারুলসহ তার পরিবার আমাকে খুব নির্যাতন করতো। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই বাসার থেকে পালিয়ে মোহাম্মদপুর কবরস্থানে ভিক্ষা করতো এমন এক নারীর সঙ্গে চলে যাই। ওই নারী আমাকে একটি বাসায় কাজ দেয়। আর সেখানেই বড় হই। সেখান থেকে আর ফিরতে পারিনি। খোঁজ করতে থাকি পরিবারের। এগুলো এরশাদের আমলের কথা, বলেন তিনি।

সুফিয়া বেগম আরও বলেন, আমার যতটা মনে পরে আমাদের এলাকার বাস্তুফায়ার বাজারে যেতে নৌকায় পার হতে হয়। আমাদের বাড়ির উঠান থেকে নদীতে লঞ্চ চলে তা দেখা যেত। আমার বাবা চাই দিয়ে মাছ ধরতো। বাবা মারা যাওয়ার আগে তার একটি অপারেশন করা হয়েছিল।

তিনি জানান, একসময় ঢাকার বাসিন্দা আমিনুরের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সংসারে জীবনে তাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মুঠোফোনে আরজে কিবরিয়ার ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে মানুষের হারিয়ে যাওয়ার গল্প শোনেন তিনি।

তখন সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর একদিন ডাক পেয়ে নিজের জীবনের গল্প শোনান। দীর্ঘদিন পর ভাই-বোন ও পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে সুফিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, পরিবারের কাছে এত দিন পর ফিরে আসার আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।

সুফিয়াকে এক পলক দেখতে সোমবার ঢাকায় আরজে কিবরিয়ার অফিসে ছুটে যান ভাই ইব্রাহিম ব্যাপারী, বোন হাসনু বেগম, ভাগনি সাদিয়া আক্তার, ভাগিনা ইসমাইল, ইউসুফ, চাচাতো ভাই শাহ জালালসহ পরিবারের লোকজন। বোনের জন্মদাগ এবং ঘটনার বর্ণনা শুনে ভাই-বোন নিশ্চিত হন, সুফিয়া তাদেরই।

সুফিয়ার বড় ভাই ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, সুফিয়া হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা অনেক খুঁজেছি। তবে বোনকে পাননি। এভাবে কেটে গেল ৩২টি বছর। বোনকে খুঁজে পেয়েছি। দীর্ঘ বছর পর বোনকে ফিরে পেয়ে তারা সবাই আনন্দিত। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

Related Articles

Back to top button