Countrywideদৈনিক খবর

সিঁড়ি ভাঙা, পুড়ছে দোকান, আগুন লাগার ভিন্ন এক কারণ জানালেন রফিকুল

নিউ সুপার মার্কেটে ঈদকে ঘিরে বেঁচা বিক্রির কাজ সেরে রাত ৩ টার দিকে ফ্লাইওভারের সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে বাসায় যান ৩২ বছর বয়সী দোকানদার রফিকুল ইসলাম রোকন। এরপর তিনি খবর পেয়ে সকালে ছটে এসে দেখতে পান সিঁড়িটি ভাঙা ও দোকানের সব আগুনে শেষ। দোকানের কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে নিউমার্কেট ফ্লাইওভারে বসে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৪ লাখ টাকা ধার নিয়ে মালামাল উঠিয়েছি।’

দোকানদার রফিক বাসাবোতে থাকেন। গত ১৭ বছর ধরে তিনি এই মার্কেটে কেনাকাটা করেন। বাজারে তার ২৯০ নম্বর দোকানটি ছিল।

তিনি বলেন, “সকালে দোকানে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। আমার সংসার আছে, সন্তান আছে। আমার স্ত্রী গর্ভবতী এখন সব সামলাবো কিভাবে?

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের সময় তাকে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তার দোকান ছাই হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

দোকানে নগদ চার লাখ টাকা ছিল। আরও ২০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। মালামাল বিক্রি হলে তিনি নতুন মাল কিনে মজুত করতেন।

রফিক বলেন, আমার দোকানে এত বেশি খদ্দের ছিল যে বিক্রি করে সামলাতে পারতাম না। এখন আমার কাছে শুধু পোড়া দোকানের চাবি আছে, আর একটা ভিজিটিং কার্ড ছাড়া কিছুই নেই।’

আমি কাকে দোষ দেব? সরকারের বদনাম করতে কেউ আগুন লাগিয়েছে কিনা? আমরা কিছুই বুঝছি না। বঙ্গবাজারে ত্রিশ হাজার, এখানে ৫০ হাজার, মোট আশি হাজার মানুষ আজ রাস্তায় বসে পড়েছেন। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডের দায় কেউ নিচ্ছে না,”প্রশ্ন রফিকের।

তিনি বলেন, আমাদের কেউ কিছু বললে আমরা সরে যেতাম। আমাদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হতো না। কেউ যদি দাবি করে থাকেন মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ তাহলে মার্কেটটি ধসে পড়বে, আগুন লাগার কথা না। বাজারে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে, তিন শতাধিক দারোয়ানই রয়েছে।

রফিক গত ১৭ বছর ধরে এই মার্কেটে কেনাকাটা করেন। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনটিকে বিপ”/জ্জনক আখ্যায়িত করে ম্যাজিস্ট্রেট দোকান ভাঙতে এসেছেন। প্রতি ঈদে তারা এটা করে।

রফিক বলেন, দুই মিনিটের মধ্যে আগুন কীভাবে পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ল? এটি কাঠের বাজার নয়। এটি শাটার সহ একটি সম্পূর্ণ পাকা বাজার। এখানে আগুন ধরা সহজ নয়।

আরেক দোকানদার বলেন, গত রাত ৪টায় এখান থেকে রওনা হয়েছি। তখন তারা দোকান ভাঙতে এসেছে। প্রতি ঈদে তারা কেন এমন করে? গতবারও ঈদের সময় তারা দোকান ভাঙতে এসেছিল। এবার তারা এসে ফ্লাইওভারের সিঁড়ি ভেঙে ফেলে। যাতে ক্রেতারা দোকানে উঠতে না পারে।

এই বাজারে প্রায় ১২০০ দোকান আছে। একইসঙ্গে বাইরের ব্যবসায়ীও রয়েছে। বঙ্গমার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটে একই সময়ে আগুন লেগেছে। এমন সময়ে আগুন লাগানো হয়েছে, যাতে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন দোকানিরা।

তিনি বলেন, “রাতে দোকানের বিক্রি কমে আসলে সেই সময় দোকান বন্ধ করে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম। পথে টাকার বিষয়ে কোনো অঘটন ঘটে তাই ভয়ে টাকা আর নিয়ে বের হইনি। কাপড় যা বিক্রি করেছিলাম তার সব টাকা আমি দোকানেই রেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর সেখানে পুড়তে কিছু বাকি নাই।’

Related Articles

Back to top button