Countrywideদৈনিক খবর

সাক্ষীদের সামনে সুলতানা এটা অপকটে স্বীকার করেছিলেন: সুলতানার মৃত্যু প্রসঙ্গে র‍্যাব

সম্প্রতি সুলতানা জেসমিন নামের এক নারীকে র‍্যাব আটক করে নেয়ার পর র‍্যাব হেফাজতে তার রহ”স্যজনক মৃ”ত্যু হয়। এই ঘটনার পর তাকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছিল সে বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে ওই নারীর বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে খন্দকার আল-মাইন যিনি র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি দাবি করেন, নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে নি”হত সুলতানা জেসমিনের মাথায় কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

এ মৃ”ত্যুর জন্য বাহিনীর কেউ দায়ী থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সুলতানার প্রয়ানের একদিন পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক চিকিৎসকরা জেসমিন সুলতানার ময়নাতদন্ত করেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর সমালোচনা করে হাইকোর্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত তিন সদস্যের বোর্ডের প্রধান ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সুলতানা জেসমিনের মাথায় আঘা”তের পাশাপাশি মস্তিষ্কে র”ক্তক্ষরণ হয়েছে।’

র‌্যাবের মুখপাত্র আজ জানান, ওই নারীর মাথায় কোনো আ”ঘাতের চিহ্নের বিষয়ে র‌্যাব অবগত নয়। আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। তার ডে”থ সার্টিফিকেটে এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। আমরা ইনজুরির কথা জানি না।

তিনি বলেন, আমরা ডে”থ সার্টিফিকেট দেখেছি, পুলিশ কেস দেখেছি। তদন্তের বিষয়ে ডাক্তারের মন্তব্য জানতে চেয়েছিলাম। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করব। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যদি এমন কিছু থাকে তাহলে, এখানে সাক্ষীরা ছিলেন, এলাকার অন্যান্য লোকজন ছিলেন, যখন কম্পিউটারে প্রিন্ট করছি, তাদেরকেও আমাদের তদন্ত কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই নারীকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মঈন বলেন, রাজশাহীতে কর্মরত যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হকের নামে ফে”সবুক খুলে একটি মহল প্রতার”ণা করছে। তিনি ২০২২ সালের মার্চ মাসে একটি জিডি করেন এবং দাবি করেন যে তার আইডি হ্যাক হয়েছে এবং আদালতে মামলা দায়ের করেন। ১৯ ও ২০ মার্চ তিনি তার নাম ও উপাধি ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং প্রতা”রণার তথ্য পান। এরপর জানতে পারেন আল আমিন নামে কেউ জড়িত রয়েছে। জেসমিন নামের একজনের সম্পর্কেও তথ্য পান।

২২ তারিখে ওই কর্মকর্তা অফিসে যাওয়ার সময় টহলরত র‌্যাবের গাড়ি দেখতে পান এবং অভিযোগ জানান। র‌্যাব তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীর অবস্থান শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করে।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “যুগ্ম সচিবের সামনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব ওই নারীকে আটক করে। তিনি জড়িত কি না, জানতে চাওয়া হয়। এসময় নারী র‌্যাব সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষীদের সামনে তিনি অপকটে স্বীকার করেন। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। লাখ লাখ টাকা জমার প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০-৩০ লাখ।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আলামত কম্পিউটারের দোকানে নিয়ে গিয়ে প্রিন্ট করা হয়। এরপর থানায় যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। নওগাঁ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গাড়ি থেকে নেমে সে চলে যায়। হাসপাতালে তার আত্মীয়স্বজন, এসি ল্যান্ডসহ অন্যরাও আসেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হয়। একটি সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখায়। পরে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

র‌্যাব সদর দফতরের অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল ঘটনা তদন্ত করছে জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল কাজ করছে। কোনো অবহেলা আছে নাকি? বিজ্ঞ আদালত আমাদের কিছু কোয়ারিজ দিয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করা হবে। গতকাল এ তদন্ত কমিটি করা হয়। সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত, নওগাঁর কালীতলা মহল্লায় নওগাঁ পৌরসভা ও চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী সুলতানা জেসমিন।

এদিকে ঘটনাটি যেহেতু র‍্যাবের হেফাজতে ঘটেছে, তাই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নানা ধরনের মন্তব্য করলেও অনেকে মুখ খুলছেন না। এমনকি প্রয়াত সুলতানা জেসমিনের ছেলেরা এবং তার ভাইয়েরাও এই ঘটনার বিষয়ে চাপা আত”ঙ্কে রয়েছেন। তার প্রয়ানের বেশ কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে সুলতানা জেসমিনের স্বজনেরা মামলা দায়ের করেননি।

Related Articles

Back to top button