ক্যান্সারপুরুষের স্বাস্থ্য

পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ছে

শুধু নারীদের নয়, স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ছে পুরুষদেরও। অথচ, ক্যান্সার হওয়া তো দূরস্থান। নিজেদের শরীরে স্তনের অস্তিত্বটুকুই যে মানতে নারাজ পুরুষকুল। আর সেটাই চিকিত্‍সকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। সচেতনতার সুর তাঁদের গলায়।

দিন পনেরো হলো বুকের ওপর একটা দলা টের পাচ্ছিলেন বছর চল্লিশের পৃথ্বীশ রায় (নাম পরিবর্তিত)। দিন কয়েক হলো, আকারে বেড়েছে সেটা। সপ্তাহান্তের আড্ডায় কথাটা বলতেই, ‘দেখ বাবা। তোর আবার স্তন ক্যান্সার হয়নি তো,’ সুলভ কথা বলে হেসে খুন হয়েছিল বন্ধুরা। যেন এটা ঠাট্টারই বিষয়! ব্যথা না থাকায় নিজেও ব্যাপারটা উড়িয়েই দিয়েছিলেন পৃথ্বীশ। একই কারণে চিকিত্‍সকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি তিনি৷ কিন্ত্ত, আরও দিন পনেরো পর ফোলাটা বেড়ে লাল হয়ে ওঠায়, বাধ্য হয়ে পারিবারিক ডাক্তারের কাছে দেখিয়ে নিতে যান। সেখান থেকে রেফার হয়ে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের কাছে।

থার্ড স্টেজ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে পৃথ্বীশের। ক্যান্সার হয়েছে। এই কথাটার চেয়েও স্তনে ক্যান্সার হয়েছে, ব্যাপারটা মানতে সমস্যা হয়েছিল ওই সরকারি চাকুরের। তাঁর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞকে বলেছিলেন, ‘আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আমার কী ভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে?’

পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সার? ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নারীদের মতোই ব্রেস্ট টিস্যু থাকে পুরুষদেরও। সেখানেই ক্যান্সারাস টিউমারের জন্ম হয়। বছর চল্লিশের পরে যা পুরুষদের শরীরে থাবা বসাতেই পারে৷ শহরের বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ তথা বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘নারীদের মতো পরিণত না হলেও, পুরুষদেরও স্তন থাকে।

সেখানে ক্যান্সার হওয়াটাও কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়৷ সংখ্যায় কম হলেও, আজকাল আমরা মেল ব্রেস্ট ক্যান্সারের বেশ কিছু কেস পাচ্ছি৷ যদিও, সেগুলো সবই প্রায় আসে অনেক লেট স্টেজে৷’ কিন্ত্ত কেন? ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা এর জন্য একযোগে দায়ী করছেন পুরুষদের আদ্যিকালের ধ্যান ধারণাকেই৷ কেমন? পুরুষরা কেউই মানতে চান না, যে তাঁদেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে।

ফলে, স্তনে কোনও মাংসপিন্ড গজালেও, সেটাকে প্রথমে এড়িয়ে যান৷ আর যতক্ষণে শুভবুদ্ধির উদয় হয়ে চিকিত্‍সকের কাছে আসেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়, ‘ বললেন এসএসকেএম হাসপাতালের অঙ্কো-সার্জন তথা ব্রেস্টক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দীপ্তেন্দ্র সরকার। যেমনটা হয়েছিল পৃথ্বীশ রায়ের ক্ষেত্রেও। অস্ত্রোপচার করে স্তন বাদ দিয়ে এখন পৃথ্বীশবাবুর কেমোথেরাপি চলছে৷

চিকিত্‍সকেরা জানাচ্ছেন, পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই ‘একটু দেরি’ প্রাণঘাতী হয়ে পড়তে পারে৷ কেন? কারণ, মহিলাদের মতো স্তনে ক্যান্সার হলেও, তা মহিলাদের তুলনায় ঢের বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ে পুরুষ শরীরে৷ দীপ্তেন্দ্রবাবু জানাচ্ছেন, ‘আসলে, মহিলাদের ব্রেস্ট টিস্যু অত্যন্ত ঘন ও পরিমাণে বেশি হওয়ায় টিউমারটি পাঁজরের পেশি বা চামড়ার সংস্পর্শে আসতে সময় নেয়৷

কিন্ত্ত, পুরুষদের স্তনকোষ অত ঘন না হওয়ায়, সেখানে কোনও টিউমারের জন্ম হলে, তা খুব কম সময়েই পাঁজরের পেশি এবং চামড়ায় ছড়িয়ে পড়ে৷ যার ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়৷’ বিপদ রয়েছে আরও৷ চিকিত্‍সকেরা জানাচ্ছেন, ‘মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ম্যামোগ্রাফি করার পরামর্শ দেওয়া হয়, স্তনে টিউমার হচ্ছে কিনা সেটা জানার জন্য৷ কিন্ত্ত, পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়৷ কারণ, পুরুষদের স্তনকোষ সুগঠিত নয়৷’

তবে স্তনে কোনও মাংসল পিন্ডের জন্ম হলেই যে তাকে ব্রেস্ট টিউমার হতে হবে, এমনটা নয়৷ অনেক সময় তা গোইনেকোম্যাস্টিয়া-ও (বয়ঃসন্ধিকালে পুরুষ শরীরে মহিলা হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় মহিলাদের মতো সুগঠিত স্তন সৃষ্টি হতে দেখা যায়৷ একেই গাইনেকোম্যাস্টিয়া বলে) হতে পারে৷ আর এই গাইনেকোম্যাস্টিয়ার সঙ্গে পুরুষদের ব্রেস্ট টিউমারের আকৃতিগত কিছুটা মিল অনেকসময়েই পুরুষ শরীরে স্তন ক্যান্সারের ‘ডিটেকশন’-এ সমস্যার সৃষ্টি করে৷ গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, ‘অনেকসময় চিকিত্‍সকেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না রোগীর গাইনেকোম্যাস্টিয়া হয়েছে না তা আদতে ব্রেস্টক্যান্সার৷ তাতেই সমস্যা হয়ে যায়৷’

তাহলে উপায়? চিকিত্‍সকদের পরামর্শ, ‘স্তনে কোনও মাংসল পিন্ডের উপস্থিতি টের পেলেই সাবধান হোন৷ চিকিত্‍সকের পারমর্শ নিন৷’

Related Articles

Back to top button