চিকিৎসাজেনে রাখুনডায়াবেটিসরোগ ব্যাধি

ডায়াবেটিসজনিত পায়ের ঘা হলে কি করবেন

ডায়াবেটিসের কারণে পায়ের যেসব রোগ হয়, তাকে ডায়াবেটিক ফুট বলে। ফুট বলতে পায়ের পাতাকে বোঝায়। তবে শুধু ডায়াবেটিসই যে দায়ী, তা নয়। অযত্ন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ব্যথার অনুভূতি নষ্ট হওয়া, ধমনির রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হওয়া, জীবাণু বা ছত্রাকের সংক্রমণ, জখম, ক্ষত ও গঠন বিকৃতিও এর জন্য দায়ী।

সাধারণত ১০-৪০ শতাংশ ডায়াবেটিক ফুটের রোগীর ব্যথার অনুভূতি থাকে না। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে সূক্ষ্ম রক্তনালি নষ্ট হয়ে গেলে স্নায়ুতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে ব্যথার অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। ডায়াবেটিক ফুটের ১০-২০ শতাংশ রোগীর ধমনি সরু হয়ে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, এমনকি রক্ত চলাচল বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

পা ফাটা, শালপড়া, অনুভূতিহীন পায়ের রোগীর অলক্ষ্যেই পুড়ে যাওয়া, টাইট জুতার জন্য ছিলে যাওয়া বা ধারালো কিছুতে কেটে যাওয়ার কারণে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষতস্থানে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে এবং দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। ব্যথাহীন হলে সেসব রোগী অনেক সময় বুঝতেই পারেন না। বুঝলেও ব্যথা না থাকায় গুরুত্ব কম দেন এবং জটিলতা হওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছে যান না।

বেশি বয়স, পুরুষ রোগী, দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, অপুষ্টি, শয্যাশায়ন বা হাঁটাচলার শক্তিহীন মানুষ, দারিদ্র্য, একাকিত্ব, ধূমপান, দৃষ্টিক্ষীণতা ও কিডনি রোগ ডায়াবেটিক ফুটের ঝুঁকি বাড়ায়।

নিয়মিত পায়ের যত্ন যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও তেল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, সঠিক মাপের জুতা পরা উচিত। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানো উচিত।

রক্ত চলাচল বন্ধ অথবা ব্যাহত হলে পায়ের ধমনি পরীক্ষা বা কালার ডপলার আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। কিছু ওষুধের মাধ্যমে ব্যাহত রক্ত চলাচলের কিছুটা উন্নতি করা যায়। সঠিক সময়ে এনজিওগ্রাফি, বেলুন এনজিওপ্লাস্টি, স্টেন্টিং (রিং), বাইপাস অপারেশন করে অনেক সময় পা কাটার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রয়োজনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও অপারেশন করে কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, নিয়মিত ড্রেসিং করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পভিসেপ, ইউসল, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছাড়াও কখনো কখনো ভিনেগার (সিউডোমনাস জীবাণু) খুবই কার্যকরী হয়। হাড়ে সংক্রমণ বোঝার জন্য এক্স-রে করা যেতে পারে, তবে ক্রনিক অস্টিওমাইলাইটিস না হওয়া পর্যন্ত হাড়ের সংক্রমণ বোঝা কঠিন।

ডায়াবেটিক রোগীর পা কাটা পড়ার আশঙ্কা একজন নন-ডায়াবেটিক রোগীর চেয়ে ২৫ গুণ। মনে রাখা দরকার, উন্নত বিশ্বে হাইপারবেরিক অক্সিজেন কিংবা রেডিওফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে দ্রুত আরোগ্যের চেষ্টা করা হয়; কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে দেশে তা সম্ভব নয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীর পায়ে ক্ষত বা ঘা দেখামাত্র দেরি না করে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।

আর সাধারণত যত্ন হিসেবে একজন ডায়াবেটিক রোগীর প্রতিদিন পায়ের পাতা নিজে নিজে পরীক্ষা করা উচিত। বিশেষ করে পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে কোনো ঘা হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।

Related Articles

Back to top button