দৈনিক খবর

নতুন আতঙ্ক: এবার রাজধানীবাসীকে পুলিশের নতুন বার্তা, থাকতে বলা হয়েছে সতর্ক

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা একটি জনবহুল শহর। আর এই শহরটিতে মানুষের বসবাস যেমন বেশি তেমনি সংগঠিত হয়ে থাকে নানা ধরনের অপরাধ। যার মধ্যে অন্যতম হলো চুরি এবং ছিনতাই। তবে সম্প্রতি সময়ে রাজধানীতে বেড়ে গেছে ছিনতাইয়ের পরিমান। বিশেষ করে রাজধানীতে রাত-দিনের আন্দোলনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন কয়েকজনের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার বা টাকা পয়সা।

ডাকাতদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অনেকে আহত হয়, এমনকি মৃত্যুও ঘটে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতে চলাচলের সময় নগরবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে রাতে নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে এবং ডাকাতির মতো ঘটনা রোধে কাজ চলছে বলেও জানান তারা।

ছিনতাইয়ের শিকারদের একটি বড় অংশ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন যানবাহনে আসা যাত্রী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যানবাহনগুলো ভোরে রাজধানীতে যাত্রী নামায়। বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার পথে অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া রাতে ও ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরা করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন অনেকে। অনেক সময় এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তার হলেও অনেক ক্ষেত্রে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

গুলশানের ফাইভ স্টার নামের একটি রেস্তোরাঁর কর্মচারী সুমন্দ্র পাল (২৭) গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকে কাজ শেষে উত্তর বাড্ডায় বাসায় ফিরছিলেন। উত্তর বাড্ডা যাওয়ার পথে লাজ ফার্মার সামনে ডাকাতদের হাতে ধরা পড়েন। এ সময় ডাকাতদের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ডাকাতরা তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

চলতি মাসের ১৮ তারিখ ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর বংশালে ছিনতাইয়ের শিকার হন ব্যবসায়ী সবুজ হাসান (২৮)। তিনি ব্যবসায়িক কাজে সিলেট থেকে ফিরছিলেন। সায়েদাবাদ থেকে বংশাল যাওয়ার পথে ঠাটারী বাজার এলাকায় মোটরসাইকেলে থাকা দুই ডাকাত তার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

গত ২২ জানুয়ারি ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে খুন হন গার্মেন্টস শ্রমিক খালু মিয়া। তিনি ডাকাতি প্রতিরোধ করলে ডাকাতরা তার বুকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে।

আবারও রাজধানীতে ২০২১ সালের ৫ মে সবুজবাগ বৌদ্ধ মন্দিরের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুনিতা রানী দাস (৫০) ডাকাতদের হাত থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ রক্ষা করতে গিয়ে রিকশা থেকে পড়ে যান। ঘটনার দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ডাকাতদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি যে প্রাইভেটকার থেকে ব্যাগটি ডাকাতরা চুরি করেছে তাও সনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী দল।

তবে, ২০২২ সালের ২৭শে মার্চ ভোরে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ডেন্টিস্ট বুলবুল আহমেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে ডাকাতির উদ্দেশ্যে ডাকাতরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডাক্তারকে আঘাত করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় বলা হয়, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কয়েকদিন আগে একটি ডাকাতি মামলায় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। জেল থেকে বের হয়ে আবারও একই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর ৫০টি থানার পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত রয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। রাজধানীতে রাতে বিশেষ করে ভোরে ডাকাতির ঘটনায় খোদ ডিএমপির পুলিশ কর্মকর্তারা খুবই উদ্বিগ্ন।

তারা বলছেন, মধ্যরাতে বা ভোররাতে ঘটনা কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা ও রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গুপ্তচররা বলছেন, বেশ কিছু অসাধু সিএনজি চালক এখন রাজধানীতে রাতের ডাকাতদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। যা যেকোনো অপরাধকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাতের বেলা যাত্রীদের কিছু নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গিয়ে তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট কারে যাতায়াত করে রাতে বিভিন্ন সড়কে যাত্রীদের তীক্ষ্ণ ঢল।

প্রসঙ্গত, এবারই প্রথম নয় এর আগেও রাজধানীবাসীকে এ নিয়ে বার বার সতর্ক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে রাতের বেলা বা সন্ধ্যার পরে নির্জন কোনো জায়গায় একেবারে না পারলে যেতে নিষেদ করা হয়েছে। রাজধানীতে পুলিশের পরিমান বেশি থাকলেও প্রতিটা জায়গায় নিরাপত্তা প্রদান করা হয়ে ওঠে না সম্ববপর। আর এই কারণে নাগরিকদের বার বার সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Related Articles

Back to top button