জেনে রাখুন

ঢাকায় যুবকদের ভাড়া করছেন উচ্চবিত্ত নারীরা

গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ‘হ্যালো স্মার্টবয়’ বলেই যুবককে ডাকলেন এক মধ্য বয়সী নারী। মৃদু হেসে যুবক এগিয়ে যান। তারপর আস্তে আস্তে কথা হয় তাদের। যুবক গাড়িতে উঠেতেই গাড়িটি বনানীর দিকে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই গুলশান-২ এর মোড়ে ঘটে ঘটনাটি। একটি জিমনেশিয়াম থেকে বের হয়ে গুলশানের ওই মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন যুবক। তার পরনে কালো প্যান্ট, কালো গেঞ্জি, কাঁধে ছোট একটি ব্যাগ। তার শরীর থেকে ভেসে আসছিল পারফিউমের ঘ্রাণ।

ঢাকায় যুবকদের ভাড়া করছেন উচ্চবিত্ত নারীরা

বারকয়েক কথা বলেছেন মোবাইলফোনে। সময় তখন রাত ৮টা প্রায়। দেখেই মনে হয়েছিল নির্ধারিত কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। অল্প সময়েই মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া গেলো নির্ধারিত সেই জন হচ্ছেন ওই মধ্য বয়সী নারী। ওই যুবককে অনুসরণ করে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সুঠামদেহী এই যুবক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি তিনি একজন যৌনকর্মী। যদিও এ জগতে Male Escort Dhaka, Escort Boy Dhaka বা Rent Boy Dhaka হিসেবে পরিচিত তিনি। ঢাকায় এরকম কয়েক শ’ Male Escort রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন রিদওয়ান সামি। এটা তার প্রকৃত নাম না হলেও এই নামেই এ জগতে পরিচিতি তার। পরিচয় গোপন করে কথা বললেও সরাসরি দেখা করতে চাননি তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুটা আজ থেকে দু’বছর আগে। তখন তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশপাশি ফরেনারদের গাইড হিসেবে কাজ করতেন। ধারণাটি আসে আমেরিকান এক নারীর মাধ্যমে। পথশিশুদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করতে ঢাকায় এসেছিলেন ওই নারী। গুলশানের একটি হোটেলে ছিলেন। ওই নারীর গাইড হিসেবে কাজ করার দ্বিতীয় দিনই তাকে বিছানায় সঙ্গ দিতে প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে তাকে পে করা হবে। তখন আমেরিকান ওই নারীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে বেশ কিছু বাড়তি টাকা আয় করেছিলেন রিদওয়ান। ওই নারী তাকে পরামর্শ দেন মেল এসকর্ট হিসেবে কাজ করলে ভালো আর্ন করবেন তিনি। তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলেন রিদওয়ান।

এ প্রসঙ্গে রিদওয়ান বলেন, শুরুতে ভেবেছি এদেশে এটা মানুষ সহজে গ্রহণ করবে না। তবে এদেশে বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। একটা শ্রেণি রয়েছে যাদের লাইফস্টাইল ফরেনারদের মতোই। তারা অন্তত সাদরে গ্রহণ করবে। আর্নও হবে। তবে ওই শ্রেণির কাছে তা প্রচার করতে হবে। এই ভাবনা থেকেই তৈরি করেন একটি ওয়েব সাইট। পরবর্তীকালে খোঁজ পান মেসেঞ্জার পাবলিক ডটকমের। সেখানে অনেক ঢাকার মেল এসকর্ট রয়েছে রিদওয়ানের মতোই। অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন সেখানে। ওই সাইটে গিয়ে দেখা গেছে এতে তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। যা দেখলে সহজে তার সম্পর্কে অনুমেয়। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ তিনি। তার উচ্চতা ৫ফুট ১০ ইঞ্চি, বয়স ২৮। এতে তিনি ইংরেজিতে যা লিখেছেন তার বাংলা হচ্ছে, ‘আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমার সঙ্গে …। আমার হট ও উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা অনুসারে প্রকৃত তৃপ্তি দেব। আমি নিরাপদ সম্পর্ক করব। আমি স্বাস্থ্য সম্মত ও রোগমুক্ত। আমি খুব পরিষ্কার এবং আপনার কাছেও তা আশা করি।’ শুধু প্রকৃত ক্লায়েন্টকে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করে ফোন নম্বর ও মেইলের ঠিকানা দেয়া আছে এতে।

এসকর্ট সার্ভিস

যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রতি মাসেই অপরিচিত পাঁচ-ছয়জন নারী ক্লায়েন্টের কল পান তিনি। বিশ্বাসযোগ্য হলেই সাড়া দেন। এছাড়া নিয়মিত কিছু ক্লায়েন্ট রয়েছে তার। একইভাবে এরকম একই সাইটে নিজের শুধু দুটি চোখের ছবি দিয়ে সস্তা এসকর্ট বয় হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সুমন আহমেদ নামে এক যুবক। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি আগ্রহী বলেই এখানে তথ্য দিচ্ছি, আপনি আগ্রহী হলে দ্বিধা ছাড়াই আমাকে কল দিতে পারেন।’ একইভাবে ওবাইস নামে এক যুবক লিখেছেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য। আপনার বাড়িতে বা অন্য কোথাও নিরাপদে।’ এতে শুধু নারীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। লিঙ্কন নামে এক ইস্কর্ট বয় জানান, তাদের ক্লায়েন্ট মূলত অভিজাত শ্রেণির ও ফরেনার কিছু নারী। দেশি অভিজাত নারীদের অনেকের স্বামী নেই। ডিভোর্সি অথবা বিধবা। নিঃসঙ্গ বোধ করেন। তারা মেইল ইস্কর্ট খুঁজেন। গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় এরকম অনেক ক্লায়েন্ট রয়েছে বলে জানান তারা। অনেক নারী শুধু শরীর ম্যাসেইজ করার জন্য সস্তা এসকর্ট বয়দের ডাকেন।

এসব কাজে ঘণ্টা হিসেবে টাকা নেন মেইল ইস্কর্টরা। প্রতি ঘন্টায় ১২ থেকে ৩০ ডলার বা ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা নেন তারা।

নারীরা সাধারণত সুঠামদেহী, শ্যামলা, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ছেলেদের বেশি পছন্দ করেন। এজন্য মেইল ইস্কর্টরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সুস্থ ও শক্তিশালী থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খান। জেন্টস পার্লারে যান নিয়মিত। তবে মেইল ইস্কর্টদের কেউ কেউ প্রতারণা করেন নারীদের সঙ্গে। ইতিমধ্যে তাদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তার নাম ফুয়াদ বিন সুলতান। গত ১লা আগস্ট তাকে উত্তরার একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব জানিয়েছে, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সে পর্নোগ্রাফির ব্যবসা শুরু করে। তার সঙ্গে অন্তত দেড় শতাধিক নারীর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও পাওয়া গেছে।

তার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ যা উদ্ধার করেছে নানা বয়সের নারীদের সঙ্গে তার অবাধ যৌনাচারের ভিডিও ক্লিপিংস, প্রচুর গর্ভনিরোধক ওষুধ, পর্নোগ্রাফির ভিডিও, কয়েক বাক্স কন্ডোম, নিষিদ্ধ বই, নিজের পর্নোগ্রাফি। সঙ্গে মেথামফেটামিন, পেনিগ্রা জাতীয় মারাত্মক যৌন উত্তেজক ওষুধ। শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ও বেশিক্ষণ সঙ্গম চালানোর জন্য এগুলি নিয়মিত ব্যবহার করতেন তিনি।

নিজেকে সুলতান অব সেক্স দাবি করে সে দাবি করেছে, নারীরা তার কাছে স্বেচ্ছায় আসতেন। তবে র‌্যাব দাবি করেছে, শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে নারীদের ব্ল্যাকমেইল করতো সুলতান। ফুয়াদ বিন সুলতান সাবেক এক উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার সন্তান।

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী বলেন, এটি সমাজের চরম অবক্ষয়। সমাজে আইন রয়েছে। ধর্ম রয়েছে। যেখানে নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে জীবন পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলার জন্যই এসব নিয়ম। শারীরিক চাহিদার জন্য বৈধ পথেই হাঁটতে হবে। নতুবা এই সভ্যতা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে। পরিবার প্রথা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা বিলীন হলে নানা অসঙ্গতি সৃষ্টি হবে। বাইরের দেশের অপসংস্কৃতি কোনোভাবেই অনুসরণ করা যাবে না। এজন্য সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। পাশপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

Related Articles

Back to top button