রোগ ব্যাধি

কাঁধে ব্যথা – পেরি-আর্থোসিস

কাঁধে ব্যথার কারণ হতে পারে অনেক। যেমন- আঘাত পাওয়া, হাড় ভেঙে যাওয়া, পেশি টান, লিগামেন্ট ইনজুরি এবং কিছু কিছু রোগ যেমন- পেরি-আর্থোসিস, বার্সাইটিস, বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি। অনেক দিন পেরি-আর্থোসিসের ব্যথা থাকলে রোগী তার কাঁধ নড়াচড়া কম করেন। ফলে কাঁধ শক্ত হয়ে যেতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস থাকে তাদেরই বেশি দেখা যায় এ রোগটি।

এ রোগকে জমাট কাঁধ বা ফ্রজেন শোল্ডার নামে অভিহিত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এ রোগকে অ্যাডহেসিভ ক্যাপসুলাইটিসনামেও অভিহিত করা হয়। অনেক সময় হার্ট ডিজিজের পর বা স্ট্রোকের পর কাঁধ শক্ত হয়ে যেতে পারে। সাধারণত মহিলাদের চেয়ে পুরুষেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ রোগে একবার আক্রান্ত হলে তা তিন মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা করলে রোগটি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।

কাঁধে ব্যথার উপসর্গ

– কাঁধের অস্থির সংযোগস্থলে ব্যথা হয় এবং কোনো কাজ করতে গেলে এ ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। শীতের সময় ব্যথাটা বেশি অনুভূত হয়।

– কাঁধের অস্থি সংযোগ জমাট হওয়ার কারণে হাত নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হয়।

– কাঁধের অস্থি সংযোগস্থলের ব্যথা রাতের বেলায় বেড়ে যায় এবং কখনো কখনো ব্যথার কারণে ঘুম ভেঙে যায়।

– প্রাত্যহিক কাজ যেমন- চুল আঁচড়ানো, জামা গায়ে দেয়া, বাথরুমে পানি ব্যবহার করা, পিঠ চুলকানো ইত্যাদি কাজ করা কষ্টকর হয়ে যায়। কখনো কখনো এ কাজগুলো করা রোগীর পক্ষে অসম্ভব হয়ে যায়।

কাঁধে ব্যথার চিকিৎসা

ওষুধ : ব্যথা উপশমকারী ওষুধ যেমন- প্যারাসিটামল বা এনএসএআইডি এবং ব্যথা থাকা অবস্থায় মাংসপেশি শিথিলকারক ওষুধ যেমন ডায়াজিপাম খাওয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়মে ওষুধ খেতে হবে।

ফিজিক্যাল থেরাপি : বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকেরা প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন- ডিপ হিট, সুপারফিসিয়াল হিট, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি এবং ক্ষেত্র বিশেষে ইলেকট্রোথেরাপি।

থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ (ব্যায়াম) : জমাট কাঁধ রোগে বিভিন্ন প্রকার থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করা একান্ত প্রয়োজন। তবে নিজের খুশিমতো ব্যায়াম না করাই ভালো। কারণ, একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসব থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের মাত্রা ও ধরন রোগের অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেন। সাধারণত যেসব ব্যায়াম দেয়া হয় তা হলো- কডম্যান এক্সারসাইজ, ওয়ালকাইমবিং এক্সারসাইজ, পুলি এক্সারসাইজ ইত্যাদি।

ইনজেকশন : জমাট কাঁধ রোগে অস্থিসংযোগের স্থানে স্টেরয়েড ইনজেকশন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়। অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এ ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ওষুধ প্রয়োগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

জমাট কাঁধ রোগীর জন্য পরামর্শ

* অল্প গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে সেঁক দেবেন।

* শোয়ার সময় ঘাড়ে ছোট নরম একটা বালিশ ব্যবহার করবেন।

* জমাট কাঁধের দিকে ভর করে ঘুমাবেন না।

* ভারী কোনো জিনিস যেমন- বেশি ওজনের বাজারের থলি, এক বালতি পানি, ছোট ছেলেমেয়ে কোলে নেয়া ইত্যাদি কাজ করবেন না।

* টিউবওয়েল চেপে পানি উঠাবেন না।

* ব্যথা বেশি থাকা অবস্থায় ব্যায়াম করবেন না।

* কোনো প্রকার মালিশ ব্যবহার করবেন না।

* ডায়াবেটিস রোগ থাকলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

Related Articles

Back to top button