economyদৈনিক খবর

এবার বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করেছে সিপিডি

বর্তমানে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোয়া। এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখি পরিস্থিতিতে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। খেয়ে না খেয়ে অনেককে দিন কাটাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)।

সোমবার (২৭ মার্চ) বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রস্তাব নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়। মাছ, মাংস, চাল, ডাল, তেল, গোলমরিচ, হলুদ, আদা, রসুনসহ ১৭টি নিত্যপণ্যের দৈনিক বাজারমূল্য এবং একজন মানুষ গড়ে কত খাবার খান তার ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়।

সিপিডি অনুসারে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার তার মোট আয়ের 60 শতাংশ খাদ্যে ব্যয় করে।

সিপিডি আরও জানায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সিটিতে চারজনের একটি পরিবার প্রতি মাসে খাবার কিনতে খরচ করে ১৮,১১৫ টাকা। মাছ-মাংস না খেয়ে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। এখন একই পরিবার প্রতি মাসে খাবার বাবদ ব্যয় করে ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকা। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারির। এক বছরে পরিবার পিছু খাদ্য ব্যয় বেড়েছে ২৫.১১ শতাংশ।

সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য রাখেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে বেতন ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে এই ঈদে বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। তাই সব খাতে ন্যূনতম মজুরি বাড়াতে হবে।

এছাড়া আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত জীবনসীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

কয়েক মাস ধরে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংস ছাড়াও ডিমের দামও অনেক বেশি। সর্বশেষ বাজারদর অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এলাকা ভেদে ১ ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। হঠাৎ করে মাছ-মাংসের দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষের খাদ্য থেকে মাছ-মাংস প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

সিপিডি অন্যান্য সুপারিশও করেছে
পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনে ৭ শতাংশ কর দিলে সরকার কোনো প্রশ্ন করবে না, আগামী বাজেটে এ সুযোগ বন্ধের সুপারিশ করেছে সিপিডি। সিপিডি বলছে, এ ধরনের সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে। এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডিও। অন্যদিকে, ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে সিপিডি।

ভর্তুকি কমিয়ে ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর সমালোচনা করেছে সংগঠনটি। সিপিডি বলেছে, বিদ্যুতের দাম বাজারে ছেড়ে দিতে হবে এবং মাসে একবার পর্যালোচনা করতে হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রথা বাতিল করে ‘বিদ্যুৎ নেই, বেতন নেই’ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রবণতা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, ব্যাংকে তারল্য ও ডলার সংকট, আর্থিক খাতের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে আগামী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। রিজার্ভ হ্রাস। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বর্তমানে অনেক বেশি যার ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এবং সেই সাথে দেখা যাচ্ছে এই সকল অবস্থার মধ্যে পরে মানুষ একরকম বিমর্ষ হয়ে পড়ছে।

Related Articles

Back to top button