খাদ্য ও পুষ্টি
খাদ্যে আঁশ বাড়ান | সুস্থ থাকুন
আঁশ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপকরণ। তবে আঁশ নিয়ে অনেক কথা এখনও জানার বাকি। আঁশ আসলে কি? আঁশের শ্রেষ্ঠ উত্স কি কি? এর স্বাস্থ্য হিতকর গুণাগুণই বা কি। মূলত: আঁশ হলো এমন শর্করা যা পরিপাক হয়না। এমন ধরণের শর্করা হলো আঁশ যা হজম হতে পারেনা। উদ্ভিজ সব খাবারে আছে আঁশ। ফল, সবজি, শুটি, শস্যকনা সব। তবে সব আঁশ এক রকমের নয় এবং এর শ্রেণী বিভাগ হয় নানাভাবে। উত্স অনুযায়ী একে ভাগ করা যায়। যেমন শস্যকনার আঁশকে বলা হয় খাদ্যশস্যের আঁশ। আর একভাবে শ্রেণীভাগ করা যায়, আঁশ পানিতে দ্রবনীয়তার উপর ভিত্তিকরে। দ্রবনীয় আঁশ জলে আংশিক দ্রবনীয়। অদ্রবনীয় আঁশ জলে দ্রবীভূত হয়না। কিছু কিছু রোগের ঝুঁকি হ্রাসে আঁশের প্রভাব নিয়ে দেখতে গেলে এই পার্থক্য বেশ জরুরী বিবেচ্য বিষয়।
বর্তমান পুষ্টি ও পরামর্শ
শিশু ও পূর্ণবয়স্ক সবাই প্রতিদিন খাবার থেকে গ্রহণ করবেন ২০ গ্রাম আঁশ, সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নয়। যত বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করবেন তত বেশি আঁশ চাই। টিনএজার ও পূর্ণ বয়স্কদের দৈনিক লাগতে পারে ৩০-৩৫ গ্রাম আঁশ।
আঁশ গ্রহণে স্বাস্থ্য হিতকরী ফলাফল
দীর্ঘ দিন ধরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি উপকরণ হিসেবে আঁশকে গ্রহণ করা হয়েছে। নানা রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে আঁশ। যেমন হূদরোগ, ডায়াবেটিস, ডাইভারটিকুলার রোগ এবং কোষ্টবদ্ধতা ইত্যাদি। তবে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকির ব্যাপারে আঁশের রয়েছে সামান্য ভূমিকা।
আঁশ ও কোলন ক্যান্সার
অনেক দিন ধরে বলা হচ্ছে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য খাদ্যে বেশি আঁশ গ্রহণ করা উচিত। তবে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো ছোট মাপের কিছু গবেষণার উপর ভিত্তি করে। বড় আকারের আর সুপরিচালিত গবেষণার ফলাফল পর্যবেক্ষণে মনে হলো খাদ্যের আঁশের সঙ্গের সম্পর্ক রয়েছে। এরমধ্যে হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় ৮০,০০০ মহিলা নার্সকে পর্যবেক্ষণ করা হলো ১৬ বছর। এতে দেখা গেলো, খাদ্যের আঁশের সঙ্গে কোলন ক্যান্সার বা পলিপের জোরালো সম্পর্ক নেই। হার্ভার্ডের একটি গবেষণার সঙ্গে অন্যান্য বড় কয়েকটি গবেষণা যুক্ত হলো: ৭০০,০০০ স্ত্রীলোক ও পুরুষের উপর ২০ বছর গবেষণা মিলিয়ে তেমনই ফলাফল পাওয়া গেলো। তবে খাদ্যে আঁশ খেলে কোলন ক্যান্সারের সুরক্ষা করেনা, এমন সরলীকরণ কেন? এর রয়েছে আরও অনেক স্বাস্থ্য হিতকরী গুণ।
খাদ্যে আঁশ ও হূদরোগ
কেবল আমেরিকা কেন পৃথিবীর অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে স্ত্রী ও পুরুষের অন্যতম প্রধান ঘাতক রোগ হলো করোনারি হূদরোগ। এই রোগ হলে করোনারী ধমনীগাত্রে, অর্থাত্ যে ধমনী হূদপেশীতে রক্ত দেয় সে ধমনীতে চর্বির স্তর জমে পলির মত। ধমনী হয়ে পড়ে দৃঢ়, কঠিন আর সংকীর্ণ হয়ে পড়ে এর পথ। একে বলে এথাবোস্লেরোসিস। করোনারী ধমনী পথ রুদ্ধ হলে পরিনতিতে ঘটে হার্ট এটাক। অনেকগুলো বড় বড় গবেষণা দীর্ঘ দিন ধরে চালিয়ে দেখা গেছে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেলে হূদরোগের ঝুঁকি কমে অনেক। ৪০,০০০ পুরুষ স্বাস্থ্য পেশাজীবির উপর হার্ভার্ডের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেলে করোনারি হূদরোগের ৪০% ঝুঁকি কমে, যারা আঁশ কম খান তাদের তুলনায়। শস্যকনার মধ্যে যে আঁশ তা বড় হিতকরী। মহিলা নার্সদের মধ্যে হার্ভার্ডের আর একটি গবেষণায় এসেছে একই রকম ফলাফল। আবার আঁশ গ্রহণের সঙ্গে মেটাবলিক সিনড্রোমের একটি যোগাযোগ আছে। মেটাবলিক সিনড্রোমের রোগ সমষ্টি যা হূদরোগ ও ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এসব উপাদানের মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ, উচু ইনসুলিন মান, অতিরিক্ত ওজন (বিশেষ করে তলপেটে মেদ) উচু মান ট্রাইগ্লিসারাইড (রক্তের চর্বি) এবং নিম্নমান এইচডিএল (হূদহিতকরী কোলেস্টেরল)। দেখা গেছে খাদ্যেশস্যের আঁশ ও গোটা শস্যদানা বেশি বেশি খেলে এই সিনড্রোম অনেকটাই প্রতিরোধ হয়।
খাদ্যে আঁশ ও ডায়াবেটিস
টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলো সবচেয়ে সচরাচর ডায়াবেটিস। এরোগে থাকে অটল উচুমান সুগার। শরীর যখন যথেষ্ট ইনসুলিন হরমোন নি:সরণ করতে পারেনা এবং তাই রক্তের সুগারও নামাতে পারেনা অথবা ইনসুলিন কিছু নি:সরণ হলেও শরীর যদি তা ব্যবহার করতে না পারে তখন হয় টাইপ-২ ডায়াবেটিস। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবার জন্য নানা উপাদানই আছে যেমন: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, শরীরকে সক্রিয় রাখা, ধূমপান না করা। গবেষকরা খাদ্যের যে উপকরণকে সম্পর্কিত করতে চাচ্ছেন তা হলো খাদ্যে আঁশ।
আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্য। হার্ভার্ডের দুটো গবেষাণা থেকে বোঝা যায়, খাদ্যশস্যের আঁশ খেলে কমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।
কি কি জিনিস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় সে প্রসঙ্গ এলে বলা যায়, আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্যশস্য গ্রহণ কম হলে এবং হাইগ্লাইসিমিক ইনডেক্স খাদ্য খেলে বাড়ে ঝুঁকি। হাইগ্লাইসিমিক শর্করা খেলে রক্তের সুগার উঠে তুঙ্গে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, হূদরোগ ও ডায়াবেটিস থেকে সুরক্ষা পেতে গেলে ভালো পরামর্শ হলো বেশিরভাগ বেলার খাবারে গোটা খাদ্যশস্য, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
আঁশ ও কোষ্টবদ্ধতা
কোষ্টবদ্ধতা একটি বড় অভিযোগ অনেকের, বয়স্কদের এ অভিযোগ বেশি। সুসংবাদ হলো পরিপাকতন্ত্র খাদ্যের আঁশের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আঁশ খেলে কোষ্ট বেশী পরিষ্কার হয়। ফল ও সবজির আঁশ থেকে আটার তুষ ও ওটতুষ অনেক ভালো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আঁশ খাওয়া এক সঙ্গে না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়ালে ভালো। সয়ে সয়ে বাড়ানো ভালো। আঁশ খাওয়া যেমন বাড়ানো হবে, তেমনি তরল গ্রহণ করাও বাড়াতে হবে।
আঁশ ও ডাইভারটিকুলার ডিজিজ
অন্ত্রের প্রদাহ রোগ, ডাইভারটি কুলাইটিস অবশ্য পশ্চিমাদেশে মলান্দ্রের এরোগ বেশ হয় বয়স্কদের মধ্যে। খাদ্যে আঁশ বেশি খেলে, বিশেষ করে অদ্রবনীয় আঁশ খেলে এরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
শেষ কথা
আঁশ হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। দিনে গ্রহণ করা উচিত অন্তত: ২০ গ্রাম। বেশি হলে ভালো। ভালো উত্স হলো গোটা খাদ্যশস্য, তাজা ফল, সবজি, শুটি, বাদাম।
কিভাবে বাড়াবেন আঁশ খাওয়া
- ফলের রস পান না করে গোটা ফল আহার করুন
- মিলেছাটা সাদা চাল, ময়দার রুটির পরিবর্তে আটা, লালচাল, গোটা খাদ্যশস্য গ্রহণ করুন
- প্রাত:রাশে খাবেন গোটা খাদ্যশস্য চিপস, ক্যাকারস, চকোলেট বার দিয়ে নাস্তা না করে কাচা সবজি খান। মাংসের বদলে মাছ, সোয়াবিন খাবেন মরিচ সুপ করে সপ্তাহে ৩/৪ দিন। ঘরে রান্না দেশি খাবার ভালো, বাইরের খাবেন যত কম পারেন।
Follow Us