রিকশাচালক থেকে ইংরেজির প্রভাষক হলেন মমিনুর

স্নাতকে ভর্তির টাকা ছিল না। রিকশা চালিয়ে টাকা জমিয়ে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এরপর প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আর্থিক অনটনে পড়ে বেশ কয়েকবার রিকশা চালাতে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকায়। তবে এত পরিশ্রম আর দৃঢ় মনোবল যায়নি বৃথা। দারিদ্র্যকে ডিঙিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। কোনো উৎকোচ ছাড়াই সংগ্রামী সেই যুবক এ বছর একটি শীর্ষ স্থানীয় মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। রিকশাচালক থেকে তিনি এখন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক।

কঠোর সংগ্রাম করে সফল হওয়া এই যুবকের নাম মো. মমিনুর রহমান। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যকুমরপুর গ্রামের মো. নুর ইসলাম-ময়না বেগম দম্পতির ছেলে। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি এ বছর কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মমিনুর রহমান এক সময় খেত-খামারে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে ও রিকশা চালিয়ে নিজের খরচ চালিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের স্নাতকে। সেখানে ইংরেজি বিষয়ে পড়া অবস্থায় প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আর্থিক সঙ্কটে পড়ে বার বার ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন তিনি।

দারিদ্র্যের কারণে দফায় দফায় পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও দৃঢ় মনোবল থাকায় পরিশ্রম করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে মমিনুর পেয়েছেন সফলতা। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলিয়া মাদরাসার প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। রিকশাচালক থেকে তিনি এখন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি। এ বছর ১০ মার্চ কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। মমিনুরের সফলতার গল্প সাধারণ আর চার পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা, তাই তার সাফল্যে খুশি স্থানীয়রাও।

অদম্য মেধাবী মমিনুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি যখন এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই, তখন প্রাইভেট পড়ার জন্য স্যারের বাড়িতে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ নিয়ে আমি মায়ের কাছে কান্নাকাটি করি। তখন নানার বাড়ি থেকে একটা পুরাতন সাইকেল পাই। তা দিয়ে প্রাইভেট পড়তে যেতাম। কিন্তু স্যারদের বেতন দিতে পারি নাই। অনেক কষ্ট করে এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হই কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে। আমার মনে আছে, অন্যের জামা কাপড় পরে কলেজ করতাম।’

Exit mobile version