দৈনিক খবর

দরকার হলে ফুলপরীকে শেষ করে দিবি, আমি গুম করে দেব: বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেত্রী

সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একছাত্রীকে পোশাকহীন করে নি”/র্যা’তন করার ঘটনাকে ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী নামক এক ছাত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করে বিশ্ববিদ্যালেয়ের ছাত্রলীগের নেত্রী এবং তার সহযোগীরা। এমনকি ঐ ছাত্রীকে গুম করার ও নির্দেশ দেন ঐ নেত্রী। এই ঘটনার পর ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার চার সহযোগীকে ১ মার্চ দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হল কর্তৃপক্ষের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি হল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক ড. আহসানুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আহসানুল হক বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পাঁচ আসামিকে হল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নি”/র্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। অন্তরা বাদে সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

এদিকে অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা নি”/র্যাতনের মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযুক্তরা জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আসা”মি বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা আমাদের ভ”য় দেখিয়ে ফুলপরীকে এক ঘণ্টার জন্য রুমে ডেকে র‍্যাগ দিতে বলেন, আমাদের যা খুশি তাই করতে বলে। সে এটাও জানায় যে, যত কিছু হবে সব আমি দেখব।’

আমরা তাকে বলি- এসব করা ঠিক নয় আপু। পরে চোখ বড় বড় করে আমাদের ভয় দেখায়। তারপর বলেন, যা বলছি তাই কর। দরকার হলে ফুলপরীকে মে’রে ফেলবি, আমি লা”/শ গুম করে দেব। এর পরে কিছু হলে আমি একাই দেখব, তোদের কিছু ভাবতে হবে না।’

আসামি আরও বলেন, ঘটনার পর অন্তরা অপু আমাদেরকে বলেছিল বাইরে কাউকে কিছু না বলতে। পরে সে জোর করে আমাদের মোবাইল থেকে সব কল লিস্ট ও মেসেজ ডিলিট করে দেয়।

এদিকে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত অন্য সহযোগীদের উদ্দেশে অন্তরা বলেন- ‘আগে আমি বাঁচি, পরে তোদের বাঁচাব’।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে র‌্যাগিং, শারীরিক নি”/র্যাতন ও পো”শাক খুলে ভিডিও করার অভিযোগ ওঠে।

এর সঙ্গে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মীম ও হালিমা খাতুন উর্মিসহ কয়েকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।

পরে তার লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। হাইকোর্টের আদেশে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর হল ত্যাগ করেন আসামি সানজিদা ও তাবাসসুম।

এদিকে ঐ ছাত্রীর বাবা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিলেও মামলা করবেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। এদিকে ঐ ছাত্রী হলে ছেড়ে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছেন। তিনি কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে, তার নিকট এসে তারা হাত-পা ধরছেন, যাতে তেমন কিছু না বলি। এই ঘটনাকে নিন্দনীয় ও দূ:খজনক বলেছেন সুশীল সমাজের মানুষেরা।

Related Articles

Back to top button