৬ শতাধিক ছবি করেও টাকার অভাবে আজ বেহাল দশা বাংলা জনপ্রিয় সেই অভিনেতার, দেহে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ
বাংলা বড় পর্দার এক সময়ের অন্যতম খ্যাতিমান ও কিংবদন্তি অভিনেতা জামিলুর রহমান শাখা। ক্যারিয়ারে একাধিক ব্যবসায় সফল সিনেমায় অভিনয় করে দারুন সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তবে গত বেশ কয়েক বছর হলো পর্দায় একদমই দেখা মেলেনি তার। বর্তমানে বার্ধ্যক্যজনীত নানা রোগে ভুগছেন তিনি।
এফডিসিতে সবাই তাকে ‘শাখা ভাই’ নামেই ডাকে। দৈনিক সমকালের প্রতিবেদক অনিন্দ্য মামুন-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
গল্পের শুরুতেই এই অভিনেতা জানান, তিনি দোহার নবাবগঞ্জ এলাকার একটি গ্রামে থাকেন। সেখান থেকে চেক নিতে ঢাকায় আসেন। এছাড়াও এফডিসিতে ভোটের মেজাজ চলছে, তা জেনে বুধবার (১২ জানুয়ারি) তিনি বেড়াতে আসেন। বলছিলেন জ্যাম ঠেলে এফডিসিতে আসার তাড়া ছিল তার।
ঢাকায় কেন থাকেন না জানতে চাইলে জামিলুর রহমান শাখা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমরা যখন ক্যারিয়ার শুরু করেছি তখন থেকে অনেক পরিচালক আর বেঁচে নেই। অনেক শিল্পীও মারা গেছেন। যারা আছে তারা সেভাবে কাজ করে না। তবে বেশিরভাগই ভালো। আমি গত 17 বছর ধরে গ্রামে বাস করছি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার সামর্থ্য নেই। এমন বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার করা সম্ভব নয়। আমার দুই ছেলে মেয়ে আছে। মেয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করে। ছেলে বাইরে কাজ করে। সপ্তাহে একবার বাড়ি আসে।
এই বয়সে আমার ঢাকায় থাকার দরকার নেই। সিনেমায় এখন তেমন কাজ নেই। কিছু নাটকে কাজ করছি। শুটিংয়ের দিন এসো। জীবনে ৬৫০টি সিনেমায় অভিনয় করলেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে পারিনি। আমি এটাকে আমার অক্ষমতা মনে করি। কিন্তু আমি হিরো হওয়ার চেষ্টা করিনি। কিন্তু বলা হয়েছিল শাবানার স্টার কাস্ট লাগবে। এভাবেই আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাকে আমি আমার নিজের ব্যর্থতাই বলব। আমি যোগ্য হলে অন্তত একবার সুযোগ পেতাম।
কিন্তু এই জীবনে আর কিছু চাই না। আমাকে সব ধরনের চরিত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র ও নায়ক ছাড়া আর কোনো চরিত্র আছে কিনা জানা নেই। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ‘রাজধানী’ ছবির কথা। আমি অনেক ভিলেন টাইপের চরিত্রে অভিনয় করেছি। তা ছাড়া, জসিম ভাইয়ের ভাষ্যমতে, ফাইটিং-এর শুটিংয়ের সময় আমি একবার তাকে বুকে ঘুষি দিয়েছিলাম। এই জিনিসটি আরও বেশি করে মনে রাখবেন।
2019 সাল নাগাদ জামিলুর রহমান শাখা চরম আর্থিক সংকটে ভুগছিল। এরপর অভিনেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর থেকে ওই টাকার ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার।
জামিলুর রহমান শাখা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছি। সেখান থেকে মাসে আট হাজার টাকা পাই। আমার মেয়ে মাসে ৩০০০ টাকা দেয়। এই এগারো হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। এভাবেই সংসার চলে। অভিনয় সেভাবে করা হয় না। দীর্ঘ যাত্রায় গাড়িতে করে শুটিংয়ে যাওয়া সবচেয়ে কঠিন। তাই তো দূরের কথা শুটিং করার সময় এটা করি না।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা করেন জামিলুর রহমান শাখা। এরপর ১৯৭০ সালে ‘রাজমুকুট’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটান তিনি।