স্বাস্থ্য খবর

স্যালাইন ঠিক ভাবে না বানানোতে বাচ্চা মারা গেল!! স্যালাইন ঠিক ভাবে বানান

অনেক বাচ্চা মারা যায় ডায়রিয়ার কারণে নয়, ভুলভাবে স্যালাইন বানানোর কারণে। সঠিকভাবে স্যালাইন  বানানো জেনে নিন। স্যালাইন ঠিক ভাবে না বানানোতে বাচ্চা মারা গেল!! স্যালাইন ঠিক ভাবে বানান

কৌতূহল নিয়ে দেখছি কি করে!!

প্রচণ্ড গরম পরেছে… পাশের সারির সিটে বসেছিল দুই ছেলে… দুজনই ছাত্র…

হাফ লিটার (৫০০ মি.লি) পানির বোতলে প্রথমে এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন ঢালল… একটু ঝাঁকি দিল… এরপর আরেক প্যাকেট স্যালাইন বের করল… সব মিলে দুই প্যাকেট স্যালাইন ঢালল ঐ হাফ লিটার পানির মধ্যেই…

জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই দুই প্যাকেট কেন ঢাললেন?

– এক প্যাকেটে অত স্বাদ পাওয়া যায় না… তাছাড়া যে গরম পড়েছে, তাতে বেশি খাওয়াই ভাল।

এরকম ভুল প্রায় লোকই করে… সবাই ভাবে, স্যালাইনই তো… কি আর হবে!! কিন্তু এটা যে কত মারাত্মক ভুল, তা বেশিরভাগ লোকই জানে না…

বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো আরো বেশি বিপদজনক…

কয়েক মাস আগের কথা… ডায়রিয়া হওয়ার পর খিঁচুনি নিয়ে এক বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।

একটু সন্দেহ হল… জিজ্ঞাসা করলাম, কি খাওয়াইছেন বাবুকে?

– কেন? স্যালাইন।

– বানাইছেন কিভাবে?

– হাফ গ্লাসের মত পানিতে এক প্যাকেট স্যালাইন গুলছি।

– নিয়ম তো হাফ লিটার বা আধা সের পানিতে স্যালাইন গুলানো। কিন্তু হাফ গ্লাস পানিতে কেন?

– ছোট বাচ্চা, অত আর স্যালাইন খেতে পারবে?

তাড়াতাড়ি বাচ্চাকে মেডিকেলে রেফার করে দিলাম। অল্প পানিতে স্যালাইন গুলানোর কারণে বেশি ঘনত্বের লবণ শরীরের ভেতরে গিয়ে লবনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে খিচুনি শুরু হয়েছে, যা খুবই মারাত্মক… কিডনি নষ্ট হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এভাবে অনেক বাচ্চা মারা যায় ডায়রিয়ার কারণে নয়, ভুলভাবে স্যালাইন বানানোর কারণে।

মনে রাখা উচিত, খাবার স্যালাইন কোন সাধারণ পানীয় নয় যে ইচ্ছেমত খাবেন। এটি ওষুধ… বমি, পাতলা পায়খানা বা গরমের ফলে প্রচন্ডরকম ঘেমে শরীর থেকে যে পানি, লবণ বের হয়ে যায়, তা পূরণ করার জন্য এটি খাওয়া হয়।

এটি নির্দিষ্ট নিয়মেই গুলতে হবে… ছোট-বড় সবার জন্য একই নিয়মে বানাতে হবে… আধা সের বা হাফ লিটার পানির মধ্যে পুরো এক প্যাকেট মিশিয়ে স্যালাইন দ্রবন প্রস্তুত করতে হবে। তবেই তা শরীরে গিয়ে কাজ করবে।

এর কম পানিতে বানালে লবনের ঘনত্ব বেড়ে গিয়ে কিডনির ক্ষতি করবে… বেশি পানিতে বানালে লবনের ঘনত্ব কমে গিয়ে সঠিকভাবে ঘাটতি পূরণ হবে না।

একবার স্যালাইন বানালে, তা সর্বোচ্চ বারো ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যায়, তবে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত রাখতেও অনেকে পরামর্শ দেন।

কখনো হাফ প্যাকেট স্যালাইন, এক গ্লাস পানি- এভাবে বানাবেন না… কিংবা পরবর্তিতে বানানোর জন্য প্যাকেটে কিছু স্যালাইন রেখেও দিবেন না… এক প্যাকেট দিয়ে একসাথে হাফ লিটারই বানাবেন…

একবার বানানোর পর, বয়স ও প্রয়োজনভেদে যতটুকু দরকার, সেখান থেকে নিয়ে সেভাবে খাবেন। শেষ হয়ে গেলে আবার হাফ লিটার পানিতে এক প্যাকেট গুলিয়ে নতুন করে বানাবেন

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি রোগ কিংবা হার্টের রুগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে স্যালাইন খাবেন।

আর হ্যাঁ, বাজারে “টেস্টি স্যালাইন” নামক যা পাওয়া যায়, সেগুলো অবশ্যই খাওয়া যাবে না.. এগুলোতে মাত্রার কোন ঠিক তো নেই-ই, এর পাশাপাশি ওষুধ প্রশাসনেরও কোন অনুমোদন নেই। বরং ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অনেক কোম্পানির টেস্টি স্যালাইনে স্যাকারিন ও কাপড়ের রং পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

Related Articles

Back to top button