স্বাস্থ্য টিপস

রাতের শিফটে কাজ যেসব মারাত্মক ক্ষতি করছে আপনার স্বাস্থ্যের!

বেশিরভাগ মানুষের জীবনই নয়টা-পাঁচটার কর্মক্ষেত্রে আবদ্ধ। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা আবার উল্টো। তাদের কাজ শুরুই হয় রাত নেমে আসার পর। আবার ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথে শেষ হয় তাদের কাজ।

শিফট ওয়ার্ক নামের এই কাজ যাদের করে যেতে হয় দিনের পর দিন, অন্যদের তুলনায় তাদের থাকতে পারে বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এসব ঝুকিয়ে সবচাইতে ভুগে থাকেন পুলিশ, ডাক্তার, সাংবাদিক ও মিডিয়া জগতের সাথে যুক্ত মানুষেরা। আসুন, জেনে নেই মারাত্মক সেই ঝুঁকিগুলোর কথা।

১) নাইট শিফটে কাজ করলে ঘুমের বারোটা বেজে যায়

পুলিশ অফিসারদের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, তারা নাইট অথবা ইভিনিং শিফটে কাজ করলে তার ফলস্বরূপ কম ঘুমিয়ে থাকেন। তাদের ঘুম হয় ছয় ঘণ্টা বা তারও কম। আর এই ঘুমের মানটাও হয় খারাপ অর্থাৎ গভীর ঘুম হয় না মোটেই। SLEEP জার্নালের আরেক গবেষণায় জানা যায়, নাইট শিফটে কাজ করলে শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা কম হয়, যার ফলে ভালো ঘুম হয় না।

২) বেড়ে যায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

শিফটে কাজ করেন যারা, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাবে অনেক। বিশেষ করে পুরুষদের মাঝে এর মাত্রা অনেক বেশি হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২২৬,৬৫২ জন ব্যক্তির মাঝে যারা নাইট শিফটে কাজ করছিলেন তাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থাকে অন্যদের তুলনায় ১.০৯ গুন। রাতে কাজ করলে ইনসুলিনের কাজ প্রভাবিত হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে।

৩) মুটিয়ে যাবার প্রবণতা বাড়ে

আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই দিনে জেগে থাকা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ায় অভ্যস্ত। এই ব্যাপারটাকে পাল্টে দিয়ে একজন মানুষ যখন দিনে ঘুমান এবং রাতভর জেগে থাকেন, তখন কিছু সমস্যা হতে বাধ্য। দেহঘড়ির এহেন বিরুদ্ধাচারের ফলে মুটিয়ে যাবার ঝুঁকি রয়ে যায় অনেক বেশি। মূলত ঘুমের অনিয়মের কারণেই এ সমস্যা দেখা যায়।

৪) বাড়িয়ে দেয় ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি

গবেষণায় দেখা যায়, নাইট শিফটে কাজ করলে নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। যারা দীর্ঘদিন ধরে নাইট শিফটে কাজ করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশ স্পষ্ট। এ ছাড়াও যারা সপ্তাহে দুই-তিন দিন নাইট শিফটে কাজ করেন (অর্থাৎ তাদের কাজের সময় সপ্তাহের একেক দিন একেক রকম হয়) তাদের ক্ষেত্রেও এ ঝুঁকি দেখা যায়।

৫) বাড়ায় হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা

যত মানুষ হার্ট অ্যাটাক করেন তাদের মাঝে ৭ শতাংশই নাইট শিফটের কর্মী হবার কারণে এর শিকার হন। এ ছাড়াও ১.৬ শতাংশ ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং ৭.৩ শতাংশ হৃদরোগের জন্যেও তা দায়ী।

৬) কর্মক্ষেত্রে আহত হবার আশঙ্কা থাকে

শারীরিক শ্রম যারা দিয়ে থাকেন, রাতের বেলায় কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের আহত হবার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। রাতের বেলায় স্বভাবতই একটু ঝিমুনি চলে আসে। এর ফলে অসতর্কতা থেকে হয়ে যায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

৭) বাড়ায় বিষণ্ণতার পরিমাণ

শুধু শারীরিক সমস্যাই নয়, বরং নাইট শিফটের কাজ থেকে মানসিক কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অন্যদের তুলনায় শিফট কর্মীদের মাঝে বিষণ্ণতায় ভোগার পরিমাণ বেশি হয়। দেখা দিতে পারে আচরণগত সমস্যা। তবে কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, রাত কাজ করার প্রতি অনিচ্ছা থেকেই এই বিষণ্ণতার উৎপত্তি।

Related Articles

Back to top button