স্বাস্থ্য খবর

মাথায় জোরে আঘাত লাগলে যা হতে পারে

মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত লাগলে যেমনটা সম্প্রতি স্কি দুর্ঘটনায় ফর্মুলা ওয়ানের কিংবদন্তি মিশায়েল শুমাখারের বেলায় ঘটেছে – ‘ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি’ হতে পারে। মাথায় এরকম আঘাতের পরিণতি অনেক সময় ভয়ংকর হয়।

ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি’ (টিবিআই) বলতে বোঝায় বাইরে থেকে প্রাপ্ত আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়া। আর  বলা বাহুল্য, মস্তিষ্কে সামান্য আঘাতও জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তবে এটাও সত্য যে মানুষের মস্তিষ্ক রক্ষায় রয়েছে শক্ত খুলি। তাই মাথায় আঘাত লাগা মানেই মস্তিষ্কে আঘাত নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথায় প্রচণ্ড জোরে কেউ ঘুসি মারলে বা বেকায়দায় পড়ে গেলে কিংবা দুর্ঘটনার কারণে আঘাত লাগলে মাথার খুলি, মস্তিষ্ক এবং তার মধ্যে থাকা রক্তনালীগুলো আক্রান্ত হতে পারে।

এ ধরনের আঘাতের প্রভাব মস্তিষ্কের উপর কতটা পড়ছে, তা খুব দ্রুত অনুধাবন করা সহজ নয়। মস্তিষ্কে বিপজ্জনক রক্তক্ষরণ কিংবা মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার মতো ব্যাপার অনেক সময় দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন পরও ঘটতে পারে।

তাই চিকিৎসকরা প্রায়ই রোগীর বাহ্যিক পরিবর্তন দেখে আঘাতের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করেন। যেমন, রোগী কেমন আচরণ করছেন, কারো ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় তিনি চোখ খুলছেন কিনা, তিনি স্বাধীনভাবে হাঁটাচলা করছেন কিনা, রোগীকে হালকা আঘাত করা হলে তিনি কি সাড়া দিচ্ছেন আর আঘাতের পর রোগী কতক্ষণ অচেতন ছিলেন।

ট্রোম্যাটিক ব্রেইন ইনজুরি’ অনেকক্ষেত্রে তেমন কোনো ক্ষতির কারণ নাও হতে পারে। আবার তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। চিকিৎসকরা মস্তিষ্কের জখমের পরিমাণ বিবেচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায় নির্ধারণ করেছেন।

প্রথম কিংবা হালকা পর্যায়কে বলা হয় ‘কনকাশন।’ এর অর্থ হচ্ছে, প্রচণ্ড আলোড়ন, আঘাত বা উত্তেজনার ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি। এই পর্যায়ে সাধারণত আঘাত লাগার কয়েকদিনের মধ্যেই মস্তিষ্ক আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

রোগী যখন মাথায় আঘাত লাগার পর ১৫ মিনিট বা তার বেশি সময় অচেতন থাকেন, তখন সেই আঘাতের মাত্রাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিবেচনা করা হয়। মাথায় আঘাতের পর ক্ষতির মাত্রা যাচাইয়ের সহজ পন্থা হচ্ছে, রোগী কতক্ষণ ধরে অচেতন আছেন তা বিবেচনা করা।

রোগী যত বেশি সময় ধরে অচেতন থাকবেন ক্ষতির মাত্রা তত বেশি বলেই ধরে নিতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আঘাতের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে চার সপ্তাহের বেশি সময় নিতে পারে।

তবে এ ধরনের আঘাতের পরিণতিতে রোগীর মনোযোগের সমস্যা হতে পারে, মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা করতে পারে, এমনকি তার আচরণও অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। কয়েক বছর পর্যন্ত এসব সমস্যা থেকে যেতে পারে।

রোগী যদি মাথায় আঘাত লাগার পর এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অচেতন থাকেন, তাহলে তাঁর ‘টিবিআই’-এর মাত্রা তৃতীয় পর্যায়ের বিবেচনা করা হয়।

আর রোগীর উপর এধরনের আঘাতের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। বিশেষ করে তাঁর শারীরিক এবং মানসিক – উভয় ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর হৃদযন্ত্রের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, তিনি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন, এমনকি তাঁর ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে। তৃতীয় পর্যায়ের ক্ষতি সাধারণত অপূরণীয় হয়।

মস্তিষ্কের ক্ষতির মাত্রা পরীক্ষায় এখন ‘ইমেজিং প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীর মস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক স্ক্যান করা হয়। তখন চিকিৎসকরা সহজেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা, বা কোথাও ফুলে গেছে কিনা কিংবা কোনো নির্দিষ্ট অংশ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বুঝতে পারেন।

মস্তিষ্কে মাঝারি বা তীব্র আঘাত পাওয়া রোগীদের হাসপাতালের ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে’ রাখা হয়। তাঁদের মাথায় দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। মানুষের খুলির আকার নির্দিষ্ট।

কিন্তু দেখা যায়, আঘাতের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিংবা কোনো অংশ ফুলে যাচ্ছে। তখন চিকিৎসকরা মাথার খুলিতে ফুটা করে মস্তিষ্কের চাপ কমানোর চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে রোগীকে ওষুধও দেওয়া হয়।

Related Articles

Back to top button