পুরুষের স্বাস্থ্য

ভায়াগ্রা – Viagra কেনার আগে জেনে নিন

সমাজে যৌনতা এবং এর সূত্র ধরে ভায়াগ্রা নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকেই সংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের পরিধি টপকে এ সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেন। ধোঁয়াশা কাটাতে ভায়াগ্রা সংক্রান্ত কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করা হল-

ভায়াগ্রা কী? What is Viagra?

ভায়াগ্রা একটি ট্রেড নেম বা নির্দিষ্ট একটি ওষুধের রাসায়নিক নামকরণ। এর মূল উপাদান সিলডেনাফিল সাইট্রেট। যা ইরেকটিক ডিসফাংশান (যৌন উত্তেজনায় অক্ষমতা) নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এটা ফাইজার কোম্পানীর বিজ্ঞানী এন্ড্রু বেল, ডেভিড ব্রাউন এবং নিকোলাস টেরেট আবিষ্কার করেন। এটা পুরুষাঙ্গে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। সিলডেনাফিল সমগোত্রীয় অন্যান্য ঔষধ টাডালাফিল, ভারডানাফিল প্রভৃতি।

প্রাথমিক পর্যায়ে ভায়াগ্রা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহার করা হলেও তাতে আশাপ্রদ ফল পাওয়া যায়নি। কিন্তু গবেষণা চলাকালীন দেখা যায়, পুরুষ রোগীদের লিঙ্গ উত্থানের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হচ্ছে। বিষয়টি লক্ষ্য করে সেই সময় ভায়াগ্রা নিয়ে নতুন ভাবনা-চিন্তা শুরু করেন গবেষকরা। মূলত অনিচ্ছুক মসৃণ কোষের শিথিলতার সময়সীমা বৃদ্ধি করে এবং পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচলের হার বাড়ানোই ভায়াগ্রার কাজ। তবে শুধুমাত্র পুরুষাঙ্গই নয়, গোটা শ্রোণী এলাকাতেই রক্ত সরবরাহ বাড়ায় ভায়াগ্রা। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শতকরা ৮৮ ভাগ ক্ষেত্রে যৌনতায় অক্ষম পুরুষ ভায়াগ্রা ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন। শুধু লিঙ্গ উত্থানের সমস্যাই নয়, এই অবস্থা ধরে রাখতেও ভায়াগ্রার ভূমিকা প্রশ্নাতীত। এর প্রয়োগে যৌন সুখের সময়সীমা বৃদ্ধি হয় বলেও প্রমাণিত।

কি ডোজে ভায়াগ্রা সেবন করবেন?

ভায়াগ্রা সেবনের পর পুরুষের পেনিসের উত্থান

বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ৫০ মিঃ গ্রাঃ এর নির্দেশিত মাত্রায় পুরুষের পেনিসের উত্থান নিশ্চিত হয়েছে এবং এই মাত্রায় খেলে স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি সবচেয়ে কম। তবে এটি রোগীর বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। রোগীর যদি যকৃত বা লিভার, কিডনি ইত্যাদি কোনো ধরনের কার্যগত সমস্যা দেখা দেয় তবে সিলডেনাফিল সাইট্রেটের ডোজ কমিয়ে ২৫ মিঃ গ্রামে আনা উচিত। আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ৫০ মিঃ গ্রাঃ ভায়াগ্রা সেবন ইরেকশনের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার যদি অন্যান্য স্বাস্থ্যজনিত ঝুঁকি না থাকে তবে ডাক্তার তার ডোজ বাড়িয়ে ১০০ মিঃ গ্রাঃ পর্যন্ত করতে পারেন। তবে কখনোই ১০০ মিঃ গ্রাঃ এর বেশি ভায়াগ্রা এক সাথে সেবন করা উচিত নয়। এতে করে আপনার তীব্র নিুরক্তচাপ দেখা দিতে পারে যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব হুমকিস্বরূপ। আরেকটি কথা বিষেশভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো ভায়াগ্রা বা সিলডেনাফিল সাইট্রেস একদিন বা ২৪ ঘন্টা সময়ের ভেতরে একেবারের বেশি সেবন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তা যে ডোজেই সেবন করা হোক না কেন।

ভায়াগ্রার সাইড ইফেক্ট

সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে ভায়াগ্রার মূল জটিলতা হলো হার্টে কোনো অসুখ থাকলে এবং এটি যদি এমনটি হয়ে থাকে যে জন্য শারীরিক কার্যক্রম পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়। এজন্য ভায়াগ্রা সেবনের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ফিজিশিয়ানের মাধ্যমে মেডিকেল ইতিহাস এবং সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে নিতে হবে। হার্ট ফেইলিওর, হার্টএ্যমিটাক , স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষণ, খুব বেশি মাত্রায় বা অল্প মাত্রার রক্তচাপ ইত্যাদি অবস্থায় ভায়াগ্রা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূূর্ণ। ফিজিশিয়ান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখবেন আপনার ইরেকশনে সমস্যা হওয়ার পেছনে মূল শারীরিক বা মনোগত কারণ কি এবং সে অনুযায়ী তিনি ঠিক করবেন আপনাকে সিলডেনাফিল সাইট্রেট দেবেন কি দেবেন না। ভায়াগ্রা সেবনজনিত আরেকটি মূল জটিলতা হলো আপনি এর সাথে অন্য আর কোনো ড্রাগ বা ওষুধ সেবন করছেন কিনা। নানা ধরনের ড্রাগের সাথে ভায়াগ্রার ইন্টারেকশন বা রাসায়নিক ক্রিয়া হতে পারে। এখন পর্যন্ত সব ধরনের ড্রাগের সাথে এর কি ধরনের ক্রিয়া পতিক্রিয়া হয় তা সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি। তবে নাইট্রেটস (জিহ্বার নিচে প্রয়োগযোগ্য গ্লিসারিন টাইনাইট্রেটস ট্যাবলেট, স্প্রে, ডাইনাইট্রেটস ইত্যাদির সঙ্গে) জাতীয় ওষুধের সঙ্গে ভায়াগ্রা সেবন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বাজারে প্রচলিত অর্গানিক নাইট্রেটসের মধ্যে রয়েছে নাইটোগ্লিসারিন, আইসোসরবাইটডাইনাইট্রেটস, নাইটোডুর, নাইটোপেস্ট এবং আইসোবিউটালনাইট্রে নামক ওষুধ। আপনি এগুলোর যে কোনোটি সেবন করতে থাকলে একই সাথে ভায়াগ্রা বা সিলডেনাফিল সাইট্রেট সেবন করলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে এবং অপরিবর্তনীয়ভাবে স্বাভাবিক লেভেলেরা অনেক নিচে নেমে যেতে পারে। এটি যেমন নানাবিধ মেডিকেল অসুস্থতার সৃষ্টি করতে পারে তেমনি দুটি একই সাথে সেবনে মৃত্যুর ঘটনাও অনেক ঘটেছে। যে সব রোগী সিমেটিডিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, কেটোকনাজল অথবা ইট্রাকনাজল জাতীয় ওষুধ সেবন করেছেন তাদের এসব ওষুধের সাথে সিলডেনাফিল সাইট্রেস বা ভায়াগ্রা সেবন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভায়াগ্রা উপরোল্লিখিত ওষুধগুলোর সাথে রাসায়নিকভাবে বিক্রিয়া করে থাকে। একে আমরা ড্রাগ ইন্টারেকশন বলি। তাই আপনি যদি ওপরের কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকেন তবে ডাক্তারকে অবশ্যই অবহিত করবেন।

ভায়াগ্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে মতান্তর

তবে প্রচলিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে মাথাব্যথা, মুখমণ্ডল রক্তবর্ণ ধারণ করা এবং দৃষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানা গেছে। বেশি মাত্রায় ভায়াগ্রা ব্যবহারে চোখের নানা সমস্যা দেখা দেওয়া বিরল নয়। সাধারণত লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যা দূর করতে ৫০ মিলিগ্রাম ভায়াগ্রাই যথেষ্ট। ক্ষেত্র বিশেষে তা ১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত প্রয়োগ করা চলে। তবে, ভায়াগ্রা বা সিলডেনাফিল সাইট্রেট ২৪ ঘণ্টায় একবারের বেশি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যৌনমিলনের এক ঘণ্টা আগে ভায়াগ্রা ব্যবহার করাই উত্তম।

ভায়াগ্রা শুধুমাত্র বেশি বয়সে ব্যবহারের জন্য নয়। কম বয়সে যদি কারও ইরেকশন না হয়, তা হলে ভায়াগ্রা ব্যবহার করা সম্পূর্ণভাবে সেফ। বরং বয়স হলে অনেকে প্রেশার ইত্যাদি রোগের জন্য নানারকম ওষুধ খায়, তখন ভায়াগ্রা খাওয়ায় বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকে, কিন্তু কম বয়সে এ ধরনের কোনও সমস্যা থাকে না। তবে আমার আদৌ ভায়াগ্রার প্রয়োজন আছে কি না, বা নিলে কীভাবে, সেটা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ না করে নেওয়া উচিত নয়। ভায়াগ্রা নিলে তা সেক্সুয়াল আর্জকে বাড়াবে বা পেনিস ভ্যাজাইনাতে বেশিক্ষণ রাখা যাবে, এমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। এটা শুধুমাত্র তাদের জন্য, যাদের ইরেকশন যথেষ্ট হচ্ছে না। ইন্টারকোর্সের জন্য যথেষ্ট মাত্রায় ইরেকশন না হলে ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্ট করা উচিত, এর চিকিত্সা সম্ভব এবং এটা কোনও বড় রোগ নয়।

Related Articles

Back to top button