রোগ ব্যাধি

ফুসফুসের ক্যান্সার

বিশ্বজুড়ে পুরুষের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রাধান্য লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের দেশের অবস্থাও অনুরূপ। ব্যাপক ও অবাধ ধূমপান, খাবারের মেনুতে চর্বিযুক্ত খাবারের আধিক্যের জন্য এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যজ্ঞান সম্বন্ধে অসচেতনতার জন্য এই দু’টি রোগ বেড়ে যাচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সার এবং এর চিকিৎসার অগ্রগতির ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান লাভের নেশায় সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারের আমন্ত্রণে দুই সপ্তাহের জন্য সেখানে অবস্থান করি। ক্যান্সার একটি মারাত্মক জটিল ব্যাধি। জটিলতা ও ভয়াবহতার দিক থেকে এইডসের পরেই ক্যান্সারের স্থান। ক্যান্সার হলো শরীরের কোষকলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকৃতি। বিজ্ঞানীরা চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার দাবি করলেও আজ পর্যন্ত ক্যান্সারের যথাযোগ্য প্রতিষেধক উদ্ভাবন করতে পারেননি। আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা যে সফলতা এত দিন অর্জন করেছেন তার বেশির ভাগই জীবাণুঘটিত রোগের ক্ষেত্রে। অ্যান্টিবায়োটিকের কল্যাণে যক্ষ্মাসহ যেকোনো জীবাণুঘটিত রোগের নিরাময় মানুষের কাছে এখন খোলামেলা ব্যাপার। কিন্তু যে রোগের জীবাণুই নেই, সেখানে করার কী আছে? এখানেই এত দিন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ছিলেন নিরুপায়।

ফুসফুসের ক্যান্সার

সিঙ্গাপুরের ক্যান্সার সেন্টারে কাজ করে মনে হয়েছে, ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসার নাটকীয় সাফল্য অর্জিত হতে যাচ্ছে।

অনেক ধরনের হয়ে থাকে। তবে আজকাল চিকিৎসার সুবিধার জন্য ফুসফুসের ক্যান্সারকে আমরা দুই ভাগ করে থাকি। স্মল সেল লাং ক্যান্সার ও ননস্মল লাং ক্যান্সার এ দুইভাগে ভাগ করে নিয়েছি আমরা। স্মলসেল লাং ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ বেশ কম। ক্যাম্পটো নামে ওষুধটি প্রয়োগ করে এর চিকিৎসায় বেশ ভালো ফল পাচ্ছি। আর ননস্মল সেল লাং ক্যান্সার চিকিৎসায় বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে টেক্সোটিয়ার নামে ওষুধটি। তবে এটি মোটামুটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। টেক্সোটিয়ার আর সিসপ্লাটিনের মিলিত ব্যবহার নন স্মলসেল লাং ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাপক সাফল্য বয়ে নিয়ে এসেছে। টেক্সোটিয়ার এই শতাব্দীতে ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি বিস্ময়কর অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। বর্তমানে ক্যান্সার নিরাময়ে কেমোথেরাপি ও বিকিরণ চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে। এই ধারার চিকিৎসায় রোগীর খারাপ কোষের সাথে সাথে ভালো কোষও মরে যায়; কিন্তু নতুন চিকিৎসায় শুধু ক্যান্সারসংক্রান্ত টিসুই লক্ষ্যবস্তু হবে। অর্থাৎ কেবল খারাপ কোষই মারা পড়বে, ভালো কোষের কোনো ক্ষতি হবে না। এই চিকিৎসায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম এবং এতই সম্ভাবনাময় যে, ক্যান্সার হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জীবাণুঘটিত রোগের মতো চিকিৎসাযোগ্য হয়ে উঠবে।

ট্যাক্সোটিয়ার নামে ওষুধটি ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রথম ও দ্বিতীয়পর্যায়ের চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত চিকিৎসার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। মানুষ যে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, এই উদ্ভাবন আবিষ্কারগুলো তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। তবে ফুসফুসের ক্যান্সার যাতে না হতে পারে তার দিকেই বেশি খেয়াল রাখতে হবে। ফুসফুসের ক্যান্সার একটি প্রতিরোধযোগ্য ব্যাধি। কারণ ধূমপান পরিহার করলে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। যে যত বেশি মাত্রায় এবং বেশি দিন ধরে ধূমপান করবেন তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তত বেশি হবে। ধূমপানের মধ্যেও আবার কিছু ব্যাপার রয়েছে, যা এই রোগের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়। যেমন সিগারেটের ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে দেয়া, একটি সিগারেটকে হাতের আঙুলের ফাঁকে না রেখে ঠোঁটের মধ্যে রেখে নিঃশ্বাস গ্রহণ করা, নেভানো সিগারেট আবার জ্বালিয়ে খাওয়া এবং সিগারেট খেতে খেতে একেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে খাওয়া ইত্যাদি। যা হোক, ক্যান্সার চিকিৎসায় আমাদের দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। ক্যান্সারের নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের ফলে এখন আর রোগীদের বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রয়োজন নেই। দেশে থেকেই ফুসফুসের ক্যান্সারের যুগান্তকারী ওষুধ ও চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সুখি চিত্ত আশা প্রকাশ করেছেন, এখন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের আর সিঙ্গাপুর-ব্যাংককে দৌড়াদৌড়ি করার প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে।

Related Articles

Back to top button