ঔষুধচিকিৎসা

পাইলস রোগ এবং এর চিকিৎসা

পাইলস অতি পরিচিত একটি রোগ। এটাকে বলা হয় সভ্যতার রোগ। অর্থাৎ এই রোগটি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের শহরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত লোকদের মাঝেই বেশি দেখা যায়। তার প্রধান কারণ তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি যেমন কম পানি, কম শাকসবজি, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সময়মতো মলত্যাগ না করা। উপরের উল্লেখিত জীবনযাপনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত প্রেসার দিতে হয়। ফলে মলদ্বারের চারদিকে রক্তনালী ও মাংসপি- ফুলে গিয়ে পাইলস সৃষ্টি করে।

পাইলস বা অর্শ একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। পঞ্চাশ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই খোসপাঁচড়ার মত চুলকানো, অস্বস্তি এবং রক্তপাত হয় যা পাইলসের উপস্থিতি বুঝায়।

পাইলস কি 

পাইলস হলো পায়ুপথে এবং মলদ্বারের নিচে অবস্থিত প্রসারিত এবং প্রদাহযুক্ত ধমনী, মলত্যাগের সময় কষা হলে অথবা গর্ভকালীন সময়ে এই সমস্ত ধমনীর উপর চাপ বেড়ে গেলে পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়।

পাইলস হয়েছে কি করে বুঝবেন 

অর্শ্ব বা পাইলস হলে নিচের সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয় :

  • মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত
  • পায়ুপথ চুলকানো অথবা অস্বস্তিকর জ্বালাপোড়া
  • ব্যথা
  • পায়ুপথ থেকে বাইরের দিকে ফোলা ও ব্যথা লাগা
  • পায়ুপথের মুখে চাকা অনুভব করা ও ব্যথা লাগা

কখন ডাক্তার দেখাবেন 

উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ামাত্র যেমন- পায়খানার রঙ কালো বা লালচে হলে এবং পায়খানার সাথে রক্ত গেলে এবং পায়ুপথের মুখে পায়খানার সময় বা পরে চাকা অনুভব করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

 কোথায় চিকিৎসা করাবেন 

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • জেলা সদর হাসপাতাল
  • মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
  • বেসরকারী হাসপাতাল

 কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে 

  • আঙ্গুল দিয়ে পায়ুপতের পরীক্ষা বা ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিন (Digital Rectal Examine) করা হয়। এতে সম্পূর্ণ মলনালীর পরীক্ষা করা হয়।
  • কলানোস্কোপী (Colonoscopy)। এটি প্রয়োজনবোধে করা হয়।

 কি ধরণের চিকিৎসা আছে

পাইলসের নানা রকম চিকিৎসা আছে। যেমন:

  • ঔষধ ব্যবহার
  • মিনিমাল ইনভেসিভ চিকিৎসা (Minimal Invasive Procedures)
  • শল্য চিকিৎসা

 জীবন যাপন পদ্ধতি

  • ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিয়মিত মলম বা ক্রিম লাগাতে হবে
  • পায়ুপথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
  • কুসুম গরম পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার জায়গাটা মুছতে/ভিজাতে হবে (Hot Bath)
  • ফোলা কমানোর জন্য আক্রান্ত স্থানে বরফ ঘষতে হবে
  • ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরমর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে

 পাইলস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

  • উচ্চ আশঁযুক্ত খাবার, ফলমূল এবং শাক-সবজি বেশি বেশি করে খেতে হবে
  • প্রতি দিন ৬-৮ গ্লাস পানি এবং তরল জাতীয় দ্রব্য পান করতে হবে
  • মলত্যাগের সময় কষা হলে বেশি চাপ প্রয়োগ করা যাবে না
  • পায়খানা চেপে রাখা যাবে না
  • ব্যায়াম করলে তা পায়খানার কষাভাব দূর করতে সাহায্য করবে
  • অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা থাকা যাবে না

প্রশ্ন. ১. কি কি কারণে পাইলস হয় ? 

উত্তর. নিচের কারণগুলোর জন্য পাইলসের সমস্যা দেখা দিতে পারে:

  • মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা
  • পায়খানায় বেশি সময় ধরে বসে থাকা
  • দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া অথবা পায়খানা কষার সমস্যা দেখা দিলে
  • অস্বাভাবিক রকম মোটা হলে
  • গর্ভবতী অবস্থায়

প্রশ্ন. ২. অর্শ্ব বা পাইলস হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ? 

উত্তর. অর্শ্ব বা পাইলসের জটিলতা খুবই কম। যেমন:

  • দীর্ঘস্থায়ী রক্ত ক্ষয়ের জন্য রক্তশূণ্যতা হতে পারে
  • অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া

প্রশ্ন.৩. ঔষধ এবং শল্য চিকিৎসা ছাড়া পাইলসের আর কোন চিকিৎসা আছে কি?

উত্তর. ঔষধ এবং শল্য চিকিৎসা ছাড়া পাইলসের আরো যেসব চিকিৎসা আছে সেগুলো হলো:

  • রাবার ব্যান্ড লাইগেশন (Rubber band ligation)
  • ইনজেকশন (Sclero therapy)
  •  কোয়াগুলেশন (ইনফ্রারেড, লেজার, বাইপোলার) Coagulation (infrared, laser or bipolar)

Related Articles

Back to top button