খাদ্য ও পুষ্টিজেনে রাখুন

গরুর মাংসের সুফল ও কুফল

গরুর মাংস পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি খাবার। এই খাদ্যে পুষ্টি উপাদান বেশি হওয়ার ফলেই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এই খাদ্যের মধ্যে মজুদ পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন উপকারেও আসে। তাই চলুন, জেনে নিই এই খাদ্যের সুফল ও কুফলগুলো।

উপকারিতা বা সুফল –

গরুর এক টুকরা মাংস থেকে পাওয়া যায় একগুচ্ছ পুষ্টি উপাদান, যার মধ্যে অন্যতম হলো :

প্রোটিন :

যা মাংসপেশিকে শক্তিশালী ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

জিংক :

যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ফসফরাস :

যা মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য জরুরি।

আয়রন :

যা রক্তস্বল্পতা দূরীকরণ এবং শরীরের সব কোষে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে। এ ছাড়া গরুর মাংসের মধ্যে প্রাপ্ত বি১২, বি৬ এবং বিরোফ্রাবিন শরীরে শক্তি সরবরাহে সাহায্য করে।

গরুর মাংসে অনেক রকম পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এমনকি গরুর মাংসে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা তুলনামূলকভাবে অনেক খাবারেই কম পাওয়া যায়। ওই সব পুষ্টি উপাদানের শারীরিক চাহিদাও থাকে।

আবার অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের মজুদ থাকায় কখনো কখনো শরীরের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই গরুর মাংস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা অনেক জরুরি। সঠিক প্রস্তুত প্রণালি ও পরিমাণে গরুর মাংস খেলে তা শারীরিক বেশ কিছু উপকারে আসে।

দেখা গেছে, গরুর মাংসের আয়রন শরীরে আয়রনের ঘটতি পূরণে সহায়ক। এই মাংসের আয়রন শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। আয়রনযুক্ত অনেক খাবারের তুলনায় গরুর মাংস অনেক বেশি আয়রন দিয়ে থাকে। তাই রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে গরুর মাংস বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

জিংক –

অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। অনেকেই এর অভাবে ভুগে থাকেন। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা। দেখা গেছে, গরুর মাংসের জিংক শরীরে প্রায় ২৫ শতাংশ শোষিত হয়। তাই জিংকের অভাব দূরীকরণে গরুর মাংসের জুরি নেই।

গরুর মাংসে প্রাপ্ত সেলেনিয়াম মানবশরীরে রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গুরুত্বপূর্ণ এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক খাবারের তুলনায় গরুর মাংসে বেশি।

গরুর মাংস প্রোটিনের অনেক ভালো উৎস। শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধিতে ভূমিকা রয়েছে। গরুর মাংস থেকে প্রথম শ্রেণির উন্নতমানের প্রোটিন পাওয়া যায়।

তিন আউন্স গরুর মাংস থেকে প্রায় ২১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। সুস্থ মাংসপেশি গঠনে যা বিশেষ ভূমিকা রাখে। গরুর মাংসে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড থাকে, যা ত্বকের জন্য অনেক জরুরি।

কুফল –

গরুর মাংসে রয়েছে কোলেস্টেরল, সোডিয়াম ও ফ্যাট, যা অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মতো বেশি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষ করে গরুর মাংসের ঝোল বা স্টক থেকে প্রচুর সম্পৃক্ত চর্বি পাওয়া যায়, যা রক্তনালিতে জমে এথেরোসক্লেরসিস ঘটাতে পারে। যা থেকে পরবর্তীকালে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

গরুর মাংসের অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা বাড়াতে সোডিয়াম সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস ঘন ঘন খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক বা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা থেকে পরবর্তীকালে আরো অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। গরুর মাংস প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের ভালো উৎস।

তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে তা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।

যেকোনো খাবারের ভালো-খারাপ দুটো দিকই থাকে। অতিরিক্ত খেলে অতিরিক্ত পুষ্টি পাওয়া যায়, আবার কম খেলে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে। তাই সুস্থ থাকার লক্ষ্যে সবাইকে সুষম খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়। সব রকম খাদ্যই স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রান্না করে পরিমাণ বজায় রেখে খেলে যেকোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব।

Related Articles

Back to top button