দৈনিক খবর

এবার রুমিন ফারহানাকে নিয়ে মুখ খুললেন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা সাত্তার

বর্তমান সময়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনায় রয়েছেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া যিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একজন সাবেক উপদেষ্টা। জানা গেছে, তিনি বিএনপি থেকে তাকে কয়েকদিন আগে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংসদ থেকে বিএনপির ৭ নেতা সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার পর তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার জন্য তার দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনি আলোচনায় রয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া তার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ জন্য তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে কাজ করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার সরাইলে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। আশুগঞ্জ ও তাকে প্রতিহত করবে।

এদিকে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সরাইল উপজেলার পরমানন্দপুর হাজী মকসুদ আলী ভূইয়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি।

বৈঠকে ছেড়ে দেওয়া আসনে আবার কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সে বিষয়ে কথা বলেন সাবেক সংসদ সদস্য আইনজীবী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে পদত্যাগ করেছি। পরে বুঝতে পারি আমার এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই।

স্বতন্ত্র থেকে আমি শুরু করেছিলাম, আবার স্বতন্ত্র দিয়েই আমি শেষ করতে চাই, এমনটাই বলেন তিনি। তিনি আরো যোগ করে বলেন, তাই আমি আপনাদের সাহায্য চাই।আপনারা আবার আমাকে কলার ছড়া মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। আমি আপনাদের বাকি কাজ যেন শেষ করতে পারি, সে জন্য আমাকে দোয়া করবেন। এ সময় উপস্থিত সবাই আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের মাধ্যমে বর্ষীয়ান এই নেতাকে নির্বাচিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

অন্যদিকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে নিয়ে মুখ খুললেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বাবা-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠীও তাকে (ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা) চিনত না। তবে আমরা তার (ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা) বাবাকে চিনতাম। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুরোধে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে রুমিন ফারহানার নাম প্রস্তাব করেছিলাম। আমার প্রস্তাবে রুমিন ফারহানা এমপি (সংসদ সদস্য) হয়েছেন। এখন আমার বিরুদ্ধে কথা বলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জানুয়ারি আশুগঞ্জের রাজমানি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন। তিনি বলেন, বিএনপির ইমেজ নষ্ট করতে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে চাপে ফেলে নির্বাচনে আনা হয়েছে এবং যেকোনোভাবেই হোক সরকার তাকে পাশ করিয়ে আনবে। এ কারণে ওই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও পরে তারা তা প্রত্যাহার করে নেন।

রুমিন ফারহানা আরও বলেন, আপনারাও বুঝেছেন এখানে ভোট হচ্ছে না। উনাকে পাশ করাতে আওয়ামী লীগের যা করা দরকার তার সবই করছে। এমনকি নিজ দলের তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও প্রত্যাহার করে নেন তারা। যে দাঁড়াবে সে পাস করবে জেনেও এই ঝুঁকিটাও আওয়ামী লীগ নিতে চাচ্ছে না। সম্ভবত তাকে ডিক্লেয়ার দিয়ে পাশ করিয়ে দেবে।

তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের ফাঁ”দে পা দিয়েছেন, এতে বিএনপির কিছু করার থাকবে না। বিএনপি এত বড় দল, এত মানুষের সমর্থন, এখানে এক বা দুইজন মীরজাফরি করল কিনা তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।

তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি বিষয় পরিষ্কার করেছেন, ঘরে ঘরে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। যাতে দলের কেউ আইনজীবী আবদুস সাত্তারের পক্ষে কাজ না করেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সাত্তারের পক্ষে কাজ করলে সে বহিষ্কার হবে। দলটি এ ব্যাপারে খুবই কঠোর।

জানা গেছে, আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন। গত ১ জানুয়ারি তার পক্ষে আবদুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। গত ৪ জানুয়ারি বাবার পক্ষে ছেলে মইনুল হাসান ভূঁইয়া মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বিএনপির এই সাবেক নেতার বিষয়টি নিয়ে দলের অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। তিনি হঠাৎ করে দলের একটি বড় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কেন, তার পেছেনের কারনও অনেক রাজনীতিবিদ নিগুড় ভাবে দেখছেন। এদিকে রুমিন ফারহানা মনে করেন ক্ষমতাসীন দলে আ.লীগ তাকে প্রলোভন দেখিয়ে এমন ফাঁদ পেতেছে। তবে তাকে এক সময় দলটি থেকে ছুড়ে ফেলা হবে, বলেও জানান তিনি।

Related Articles

Back to top button