জন্মনিয়ন্ত্রণ

ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিধান

জন্মনিয়ন্ত্রণ (Birth control) আন্দোলন আঠারো শতকের শেষাংশে ইউরোপে সূচনা হয়। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসই (Malthus) এর ভিত্তি রচনা করেন। এ আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য হলো- বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধ।

জন্মনিয়ন্ত্রণ

 

জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার দেখে মি. ম্যালথাস হিসাব করেন, পৃথিবীতে আবাদযোগ্য জমি ও অর্থনৈতিক উপায়-উপাদান সীমিত। কিন্তু বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমাহীন। ১৭৯৮ সালে মি. ম্যালথাস রচিত An essay on population and as it effects, the future improvment of the society. (জনসংখ্যা ও সমাজের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে এর প্রভাব) নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম তার মতবাদ প্রচার করেন।
এরপর ফ্র্যান্সিস প্ল্যাস (Francis Place) ফরাসী দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করার প্রতি জোর প্রচারণা চালান। কিন্তু তিনি নৈতিক উপায় বাদ দিয়ে ওষুধ ও যন্ত্রাদির সাহায্যে গর্ভনিরোধ করার প্রস্তাব দেন।
আমেরিকার বিখ্যাত ডাক্তার চার্লস নোল্টন (Charles knowlton) ১৮৩৩ সালে এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন সূচক উক্তি করেন। তিনি তার রচিত The Fruits of philosophy নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম গর্ভনিরোধের চিকিৎসা শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা এবং এর উপকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু মাঝখানে ১৮৪০ সাল থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত এ আন্দোলন বন্ধ থাকে। ইংল্যান্ডের অধিবাসীরা এর প্রতি কোনোরূপ গুরুত্বারোপ ও সহযোগিতা করতে অস্বীকার জানিয়েছিলেন।আবার ১৮৭৬ সালে নতুন করে ম্যালথাসীয় আন্দোলন (New Malthusian Movment) নামক নতুন আন্দোলন শুরু হয়। মিসেস অ্যানী বাসন্ত ও চার্লস ব্রাডার ডা. নোল্টনের (Fruits of philosophy) গ্রন্থটি ১৮৭৬ সালে ইংল্যান্ডে প্রকাশ করেন। ১৯৭৭ সালে ডা. ড্রাইসডেল (Drysdale)-এর সভাপতিত্বে একটি সমিতি গঠিত হয় ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচার কার্য শুরু হয়ে যায়।১৮৭৯ সালে মিসেস বাসন্ত-এর রচিত Law of population (জনসংখ্যার আইন) নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৮৮১ সালে হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও জার্মানিতে এ আন্দোলন ছড়িয়ে যায় এবং ক্রমে ইউরোপ ও আমেরিকার সকল সভ্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানে স্থানে জন্মনিরোধ ক্লিনিক (খুলে দেয়।(ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ, (
বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্বে জন্মনিয়ন্ত্রণের নামে প্রকাশ্যে সন্তান হত্যার হিড়িক পড়ে গেছে। এমনকি দৈনিক পত্রিকাসহ সকল মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারণা চলছে। যেমন : ‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দু’টি সন্তানই যথেষ্ট, দুইটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’ ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু স্যাটেলাইট ক্লিনিক গর্ভবর্তী মায়ের সেবার নামে গর্ভপাত ঘটানোর গ্যারেজে পরিণত হয়েছে।

জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি-

জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি দু’প্রকারঃ
(১) সাময়িক ব্যবস্থা ও
(২) স্থায়ী ব্যবস্থা।

সাময়িক ব্যবস্থাঃ

(ক) আযল তথা ভিতরে বীর্যপাত না করা (With drawal)।
(খ) নিরাপদ সময় মেনে চলা (Safe period) ।
(গ) কনডম ব্যবহার।
(ঘ) ইনজেকশন পুশ।
(ঙ) পেশীতে বডড়ি ব্যবহার।
(চ) মুখে পিল সেবন ইত্যাদি।

স্থায়ী ব্যবস্থাঃ

(ক) পুরুষের অপারেশন।
(খ) নারীর অপারেশন।
(ক) পুরুষের অপারেশনঃ

ভাসেকটমি

পুরুষের অন্ডকোষে উৎপাদিত শুক্রকীটবাহী নালী (Vas deferens) দু’টি কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফলে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে, কিন্তু বীর্যে xy ক্রমোজম শুক্রকীট না থাকায় সন্তান হয় না।

(খ) নারীর অপারেশনঃ

কপার টি

 

নারীর ডিম্বাশয়ে উৎপাদিত ডিম্ববাহী নালী (Fallopian Tube কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফলে পূর্ণ xx ক্রমোজম ডিম্ব (Matured Ovum) আর জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে না। নারী অথবা পুরুষে যেকোন একজন স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, অন্যজনকে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় না। কারণ নারীর ডিম্ব পুরুষের শুক্রকীট দ্বারা নিষিক্ত না হলে সন্তানের জন্ম হয় না।

জন্মনিয়ন্ত্রণের কুফল

জন্মনিয়ন্ত্রণের বহুবিদ কুফল রয়েছে। এর মধ্যে কিছু নিম্নে আলোচনা করা হল-
ব্যাভিচারের প্রসার : ব্যাভিচার সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অবৈধ যৌন সম্ভোগের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩২)
কিন্তু শয়তান মানুষকে দরিদ্রতার ভয় দেখিয়ে অসামাজিক, অনৈতিক কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করে। নারী জাতি আল্লাহ ভীতির পাশাপাশি আরও একটি নৈতিকতা রক্ষা করতে বাধ্য হয়। তাহলো অবৈধ সন্তান জন্মের ফলে সামাজিক মর্যাদা বিনষ্ট হবার আশঙ্কা। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে, এ আশঙ্কা থেকে একদম মুক্ত। যারা নৈশক্লাবে নাচ-গান করে, পতিতা বৃত্তি করে, প্রেমের নামে রঙ্গলীলায় মেতে উঠে, তারা অবৈধ সন্তান জন্মানোর আশঙ্কা করে না।
তাছাড়া কখনও হিসাব নিকাশে গড়মিল হয়ে অবৈধ সন্তান যদিও গর্ভে এসে যায়, তবে স্যাটেলাইট ক্লিনিক নামের সন্তান হত্যার গ্যারেজে গিয়ে প্রকাশ্যে গর্ভ নষ্ট করে ফেলে।
ইংল্যান্ডে প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৮৬ জন নারী বিয়ে ছাড়াই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। অবৈধ সন্তান জন্মের সময় এদের শতকরা ৪০ জন নারীর বয়স ১৮-১৯ বছর, ৩০ জন নারীর বয়স ২০ বছর এবং ২০ জন নারীর বয়স ২১ বছর। এরা তারাই যারা জন্মনিয়ন্ত্রণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও এ দুর্ঘটনাবশত গর্ভবতী হয়েছিল।
সেখানে প্রতি তিন জন নারীর একজন বিয়ের পূর্বে সতীত্ব সম্পদ হারিয়ে বসে। ডা. চেসার তার রচিত ‘সতীত্ব কি অতীতের স্মৃতি?’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ভাষায় বর্ণনা করেছেন।
আমেরিকার বিদ্যালয় সমূহে অশ্লীল সাহিত্যের চাহিদা সর্বাপেক্ষা বেশি। তরুণ-তরুণীরা এসব অধ্যয়ন করে অশালীন কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়া হাইস্কুলের শতকরা ৪৫ জন ছাত্রী স্কুল ত্যাগ করার পূর্বে চরিত্রভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। আর এদের যৌন তৃষ্ণা অনেক বেশি। ব্রিটেনেও শতকরা ৮৬ জন যুবতী বিয়ের সময় কুমারী থাকে না।
প্রাশ্চাত্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে তাদের শিক্ষা ব্যয়ের প্রায় অধিকাংশ খন্ডকালীন যৌনকর্মী হিসাবে অর্জন করে থাকে। মঙ্গোলয়েড দেশসমূহে যৌন সম্পর্কীয় বিধি-বিধান অত্যন্ত শিথিল।
থাইল্যান্ডের ছাত্রীদের বিপুল যৌনতা লক্ষ্য করা যায়। (মাসিক পৃথিবী (
চীনের ক্যান্টন শহরে কুমারীদের প্রেম বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিদ্যালয় খোলা হয়েছে।
পশ্চিমা সভ্যতার পূজারীরা সর্বজনীন অবৈধ যৌন সম্পর্কের মহামারীর পথ প্রশস্ত করেছে

চীনে যৌন স্বাধীনতার দাবি সম্বলিত পোস্টারে যার সঙ্গে খুশী যৌন মিলনে কুণ্ঠিত না হওয়ার আহবান জানানো হয়।খবর,
ইউরোপে যৌন স্বাধীনতার দাবিতে পুরুষের মত নারীরাও নৈতিকতা হারিয়ে উচ্ছৃংখল ও অনাচারী এবং সুযোগ পেলেই হন্যে হয়ে তৃপ্ত করত যৌনক্ষুধা। অশুভ এই প্রবণতার ফলে বৈবাহিক জীবন ও পরিবারের প্রতি চরম অনিহা সৃষ্টি হয়।ভ্রান্তির
অর্থ সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে আমেরিকার ৭৫ লাখ নারী পুরুষ বিবাহ ব্যতীত ‘লিভ টুগেদার’-এ।
পাশ্চাত্যের তরুণীরা যাতে অপ্রত্যাশিতভাবে গর্ভবতী না হয়ে পড়ে, সেজন্য তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে গর্ভনিরোধের দ্রব্যাদি দেওয়া হয় এবং এ সকল দ্রব্য ব্যবহারের বিষয়ে তাদেরকে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়ে থাকে। এমনকি মায়েরা মেয়েদেরকে এই সকল দ্রব্য ব্যবহারের কায়দা-কৌশল শিক্ষা দিয়ে থাকে। গর্ভনিরোধ দ্রব্যাদির ব্যবহার সম্পর্কে স্কুল-কলেজে প্রচারপত্র বের করে এবং বিশেষ কোর্সেরও প্রবর্তন করে। এর অর্থ হল- সকলেই নিঃসংকোচে মেনে নিয়েছে যে, তরুণ-তরণীরা অবৈধ যৌন সম্ভোগ করবেই। (
পাশ্চাত্যে ক্রমবর্ধমান অবৈধ যৌন স্বাধীনতাই সবচাইতে ক্ষতিসাধন করেছে। নারীর দেহকে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টাই বাকি রাখা হয়নি। অবিবাহিত নারীদের গর্ভধারণের সংখ্যা বৃদ্ধি, অবৈধ সন্তান জন্ম, গর্ভপাত, তালাক, যৌন অপরাধ ও যৌন ব্যাধিই এর প্রমাণ। অন্যদিকে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফলে কোন আইন-বিচার ও আইনি শাস্তির বিধান নেই। বরং এটাকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে বিবেচনা করা হয়
সম্প্রতি ভারতেও অবৈধ যৌন সম্প্রীতি ও হিন্দু-মুসলমান যুবক-যুবতীর নির্বিঘ্নে বিবাহ বন্ধন এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের নামে গর্ভপাত ঘটানোর হিড়িক পড়ে গেছে।

জন্মনিয়ন্ত্রণে জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব

নারীর ব্যাভিচার দিনদিন প্রসার লাভ করে চলেছে। নারী স্বাধীনতার নামে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে গেছে। এই অবৈধ যৌন সম্ভোগের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মারাত্মক জটিল সব রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে জীবাণুনাশক ওষুধ, পিল, কনডম ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহারের ফলে তৎক্ষণাৎ কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু বেশ কিছু কাল যাবৎ এসব ব্যবহার করার ফলে মধ্যবর্তী বয়সে উপনীত হতে না হতেই নারী দেহের স্নায়ুতন্ত্রীতে বিশৃঙ্খলা (Nervous instability) দেখা দেয়। যেমন : নিস্তেজ অবস্থা, নিরানন্দ, উদাসীনতা, রুক্ষমেজায, বিষণ্ণতা, নিদ্রাহীনতা, মস্তিষ্কের দুর্বলতা, হাত-পা অবশ, শরীরে ব্যথা, স্তনে সাইক্লিক্যাল ব্যথা, ক্যান্সার, অনিয়মিত ঋতু, সৌন্দর্য নষ্ট ইত্যাদি।’

নারী-পুরুষ অবৈধ যৌন মিলনে সিফিলিস, প্রমেহ, গণরিয়া, এমনকি এইডস-এর মত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যে সমস্ত বিবাহিতা নারীর দেহে অস্ত্রপচার করা হয়, তাদের শতকরা ৭৫ জনের মধ্যেই সিফিলিসের জীবাণু পাওয়া যায়।
সিফিলিস রোগে আক্রান্ত রোগী সুচিকিৎসা গ্রহণ না করলে মারাত্মক সব রোগের সৃষ্টি হয়। এইডস রোগের ভাইরাসের নাম এইচ. আই. ভি (HIV)। এ ভাইরাস রক্তের শ্বেত কণিকা ধ্বংস করে। এ রোগ ১৯৮১ সালে প্রথম ধরা পড়ে এবং ১৯৮৩ সালে একজন ফরাসী বিজ্ঞানী এইচ. আই. ভি ভাইরাসকে এই রোগের কারণ হিসাবে দায়ী করেন। (

বল্গাহীন ব্যাভিচারের ফলে এই রোগ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। ডা. হিরোশী নাকজিমা বলেন, জনসাধারণের মধ্যে এইডস বিস্তার লাভ করলে সমগ্র মানবজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
জন্মনিরোধ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে নানা প্রকার রোগ বদঅভ্যাসের প্রসার ঘটেছে। তন্মধ্যে কনডম ব্যবহার বা আযল করার জন্য নারীরা মিলনে পরিতৃপ্ত না হতে পেরে অবৈধ মিলনের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। স্তনে সাইক্লিক্যাল ব্যথা, স্তনচাকা বা পিন্ড, স্তন ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে স্তনে এ ধরনের ব্যথা ও পিন্ড তৈরি হয় এবং ৭৫% নারী স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে।
বুক ও জরায়ুর কার্সিনোমা হতে পারে শর্করা জাতীয় খাদ্য সহ্য হয় না, লিভার দুর্বল হয়, রক্ত জমাট বাঁধতে ব্যহত হয়, বুকের দুধ কমে যায় এবং Lactation কম হয় এবং দেহে ফ্যাট জমা হয়।
এছাড়া জরায়ু ক্যান্সার ও স্থানচ্যুতিসহ আরও অনেক রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জন্মনিয়ন্ত্রণে জন্মের হার কমে যাওয়া

ওরাল পিল

আগত ও অনাগত সন্তান হত্যার ব্যাপারে মহান আল্লাহ নিষেধ করেন, ‘তোমরা অভাব ও দরিদ্রতার আশঙ্কায় তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না।’
কিন্তু শয়তান আল্লাহর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘‘আমি অবশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দিব। আর তারা তদনুযায়ী সৃষ্টির কাঠামোতে রদবদল করবে।’
এই রদবদল শব্দের অর্থ খুঁজতে গেলে বর্তমান যুগের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অন্যতম। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের নামে যারা সন্তান হত্যা বা অনাগত ভবিষ্যত বংশধরদের হত্যা করে চলেছে, তারা সন্তানের জন্মকেই দারিদ্রের কারণ বলে চিহ্নিত করেছে। আর সেজন্যেই ক্রমশ, জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলন নির্লজ্জভাবে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জ্যামিতিক হারে হরাস পেয়েছে। ভবিষ্যৎ বংশধর উৎপাদন ব্যাহত হলে মানব জাতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যার ফলশ্রুতিতে মুনাফা অর্জনের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি সক্রিয় হবে।

জাহেলী যুগে সন্তানের আধিক্য থেকে বাঁচার জন্য লোকেরা সন্তান প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যা করত। গর্ভ নিরোধের প্রাচীন ও আধুনিক যত ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে, সবগুলোই মানব বংশ ধ্বংসের পক্ষে কঠিন বিপদ বিশেষ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ইউরোপ তাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ বিবেচনা করেছে।)
জন্মনিয়ন্ত্রণ জন্মহার হ্রাসের একমাত্র কারণ না হলেও অন্যতম প্রধান কারণ একথা নিশ্চিত।
ইংল্যান্ডের রেজিস্ট্রার জেনারেল নিজেই একথা স্বীকার করেছেন যে, জন্মহার হরাস পাওয়ার শতকরা ৭০ ভাগ জন্ম নিয়ন্ত্রণের দরুণ ঘটে থাকে।
ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকাতে বলা হয়েছে, পাশ্চাত্য দেশসমূহের জন্ম হার হ্রাস প্রাপ্তির কারণগুলোর মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের কৃত্রিম উপকরণাদির প্রভাব অত্যধিক। জন্মনিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবারকে সীমিত করার প্রবণতার কারণেই জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে।
ফ্রান্স সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায় ও পদ্ধতিকে পরীক্ষা করেছে। একশত বছর পর সেখানে প্রতিটি জেলায় মৃত্যুহারের চেয়ে জন্মহার কমে যেতে থাকে। আর এই জনসংখ্যার হার কমে যাওয়ার ফলে দু’টি বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্স এমন শোচনীয় পরাজয় বরণ করে যে, বিশ্বে তার প্রভাব প্রতিপত্তির সমাধি রচিত হয়।
ফিডম্যান বলেন, সমষ্টিগতভাবে আমেরিকান শতকরা ৭০টি পরিবার জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আর বৃটেন ও আমেরিকার অবস্থা পর্যবেক্ষণে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, পরিবারগুলোর ক্ষুদ্র আকার প্রাপ্তির মূলে রয়েছে জন্মনিরোধের প্রচেষ্টা
যদি ম্যালথাস আজ জীবিত থাকতেন, তাহলে এটা নিশ্চয়ই অনুভব করতেন যে, পাশ্চাত্যের লোকেরা জন্ম নিরোধ করার ব্যাপারে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশী দূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছে। পাশ্চাত্যের শিল্প ও নগর সভ্যতার কারণে অন্যান্য জাতিও বিপদের সম্মুখীন।

সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়-
পুরুষের দুর্বলতা

জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তাতে ক্রমশ, পারস্পরিক সদ্ভাব ও ভালবাসা হরাস এবং অবশেষে ঘৃণা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তাছাড়া নারীদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যে বৈকল্য দেখা দেয় এবং তার মেজায দিন দিন রুক্ষ হয়ে উঠে, ফলে দাম্পত্য জীবনের সকল সুখ-শান্তি বিদায় নেয়। সন্তানই স্বামী-স্ত্রীকে চিরদিন একত্রে সংসার গঠনের ভূমিকা রাখে। এজন্য বলা যায়, সন্তানই পরিবার গঠনের সেঁতুবন্ধন।

ইউরোপ ও আমেরিকাতে দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং জন্মনিরোধ আন্দোলন প্রসারের সঙ্গে তালাকের সংখ্যাও দিন দিন দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে, সেখানে এখন দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবন চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
সমস্ত ইউরোপের সামাজিক দৃশ্যপট বদলে যায় শিল্প বিপ্লবের অভিঘাতে। আমূল পরিবর্তন আসে গ্রামীন জীবনেও, ভেঙে যায় পারিবারিক জীবনের ভিত। নারীরা কল-কারখানায় নির্বিঘ্নে কাজ করতে শুরু করে। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লাখ লাখ ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান তরুণ নিহত হল। ফলে বিধবা হল অগণিত নারী। যুদ্ধ বিড়ম্বিতা নারীরা বাধ্য হয়ে পুরুষের শূন্যস্থান পূরণ করতে গিয়ে কারখানা মালিকের নিকটে শ্রম বিক্রয়ের পাশাপাশি কমনীয় দেহটাও মনোরঞ্জনের জন্য দিতে হল। যৌবনের তাড়নায় ইন্দ্রিয় ক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য তাকে বেছে নিতে হল অবাধ বিচরণের পথ। আর নারীর মনের গভীরে পেটের ক্ষুধার সঙ্গে যুক্ত হল অতৃপ্ত যৌনতা এবং দামী পোশাক ও প্রসাধনীর প্রতি প্রচন্ড মোহ।
জন্মনিয়ন্ত্রণের ফলে চরিত্রের ক্ষতি সাধিত হয়। এ ব্যবস্থা নারী-পুরুষের অবাধ ব্যভিচারের সনদ দিয়ে থাকে। কেননা এতে জারজ সন্তান গর্ভে ধারণ ও দুর্নাম রটনার ভয় থাকে না। এজন্য অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অতি উৎসাহী হয়ে ওঠে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে শিশুরাও তাদের মেধা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। যদি অন্য ছোট-বড় ভাই বোন খেলার সাথী হিসাবে থাকে, তবে তাদের সঙ্গে একত্রে থাকা ও মেলামেশা, সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি শিক্ষণীয় গুণাবলী তার মাঝেও প্রস্ফুটিত হয়।
মনস্তত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, একাকিত্বের ফলে শিশুদের মন-মগজের সুষ্ঠু বিকাশে বাধা সৃষ্টি হয়। এমনকি দু’টি শিশুর বয়সের পার্থক্য বেশি হলে নিকটস্থ ছোট শিশু না থাকার কারণে বড় শিশুটির মস্তিষ্কে (Neurosisi) অনেক ক্ষেত্রে রোগও সৃষ্টি হয়।

জন্মনিয়ন্ত্রণে অর্থনৈতিক ক্ষতি-
প্রসব বেদনা

জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে নৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির পাশাপাশি এ সমস্ত উপকরণ ব্যবহারের জন্য জাতীয় রাজস্বে বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়। এটাকে এক ধরনের অপচয় বললেও ভুল হবে না।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা) অপব্যয় কর না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’
‘খাও ও পান কর, অপব্যয় কর না। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীকে পসন্দ করে না।
বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণ জনসংখ্যা হ্রাস জনিত যুক্তি দিন দিন অধিকতর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর কারণ হল- জন্মহার ধারাবাহিকভাবে (Topering) কমে যাওয়ার ফলে একদিকে পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে বাড়তি জনসংখ্যার কারণে পুঁজি বিনিয়োগ ব্যবস্থা উন্নত হয়।
কেনসি হাসান বলেন, জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করলে সমাজের অর্থনৈতিক তৎপরতাও অনেক বেড়ে যায়। সে সময় সম্প্রসারণকারী শক্তিগুলি (Expansive) সংকোচনকারী শক্তিগুলির (Contractive) তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়। তখন অর্থনৈতিক তৎপরতা বিশেষভাবে বেড়ে যায়। অর্থাৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক তৎপরতা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। আর জনসংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক তৎপরতা হ্রাস পায়।
বাংলাদেশ অতি ছোট দেশ। এ দেশের সামান্য আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি। কিন্তু প্রতিবছর এদেশ শ্রমশক্তি বিদেশে রফতানি করে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। এই বিশাল জনসংখ্যা যদি শ্রমশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়, তাহলে এ জনসংখ্যা ক্ষতির কারণ না হয়ে আশীর্বাদের কারণ হবে। যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের রাজস্ব খাতে বিরাট ভূমিকা রাখছে, নিশ্চয়ই তা বেকারত্ব দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
অন্যথা ‘পরিবার পরিকল্পনার’নামে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে, জনশক্তির অপমৃত্যু, অন্যদিকে অর্থনৈতিক অবক্ষয়। এই জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় কনডম, ইনজেকশন, বড়ি ও খাবার পিল ইত্যাদি। সরকারের পক্ষ থেকে যে খাবার পিল বিতরণ করা হয়, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। কিন্তু বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি যে পিল বের করেছে তা উচ্চ মূল্যে (৫০-৮০ টাকা) ক্রয় করে জনগণ ব্যবহার করছে। এতে পুঁজিবাদীরা জনগণের পকেট ফাঁকা করে চলেছে জন্মনিয়ন্ত্রণের নামে।
গ্রামাঞ্চলে একটি শিশুর জন্ম দানের জন্য এত টাকা ব্যয় করতে হয় না, যত টাকা ব্যয় করতে হয় জন্মনিরোধ উপকরণাদি ক্রয়ের জন্য।

জন্মনিয়ন্ত্রণের ফলে শ্রমজীবী লোক দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার ফলে পুঁজিবাদীরা উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করে মিল-কারখানায় উৎপাদন করছে। এতে দ্রব্যমূল্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ফলে পণ্যের ব্যবহারও দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদনও কমে আসছে। অতএব জন্মনিয়ন্ত্রণ আমাদের কোনো সুফল বয়ে আনেনি বরং অর্থনৈতিক ও নৈতিকতার মহা ক্ষতির কারণ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে।

ইসলামে দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিধান

মহান আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করে আদি পিতা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেন। কিন্তু মাতা হাওয়াকে (আ.) সৃষ্টির কোন প্রয়োজন ছিল কি? যদি একটু চিন্তা করি, তবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ আদম (আ.)-এর একাকীত্ব দূর করতে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে হাওয়াকে (আ.)-কে শুধু সৃষ্টি করেননি। বরং আরও একটি বিশেষ কারণে তাকে সৃষ্টি করেছেন। তাহল মহান আল্লাহ তাদের ঔরশজাত সন্তান দ্বারা সমগ্র পৃথিবী কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দিতে চেয়েছেন। আর সমস্ত মানব তার (আল্লাহর) একত্ব ঘোষণা পূর্বক দাসত্ব করবে। এ হল আদম ও হাওয়া (আ.)-এর সৃষ্টির একান্ত উদ্দেশ্য। আমরা সেই অনাগত সন্তানদের নির্বিঘ্নে হত্যা করে চলেছি।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে, আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই রিযিক দান করব।’
আলোচ্য আয়াতে খাবারের অভাবের আশঙ্কা অনাগত সন্তানকে হত্যা করতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট নিষেধ করেছেন। আবার বললেন, ‘আমি তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই দিব’। ‘আমিই দিব’এই প্রতিশ্রুতির ব্যাখ্যা হল- অনাগত সন্তানদের রিযিকের মালিক আল্লাহ। তার খাদ্য ভাণ্ডারে খাবারের হিসাব অকল্পনীয়।
আবার তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মারাত্মক ভুল।’
তিনি যথার্থই বলেছেন, অনাগত সন্তান হত্যা করা বিরাট ভুল। ভূপৃষ্ঠে একচতুর্থাংশ স্থল, বাকী সব সাগর, মহাসাগর। কিন্তু বর্তমানে মহাসাগরে হাওয়াইন দ্বীপপুঞ্জের মত ছোট-বড় দ্বীপ জেগে উঠেছে এবং নদী ভরাট হয়ে চর জেগে উঠেছে। এভাবে আমাদের আবাদী জমি ও বাসস্থান বাড়ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তির উপাদান ও বাহন।’
আল্লামা আলুসী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ধন-সম্পদ হচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর উপায়। আর সন্তান হচ্ছে- বংশ তথা মানব প্রজাতি রক্ষার মাধ্যম। (
জনৈক রুশ লেখক তার Biological Tragedy of Woman গ্রন্থে বলেছেন, নারী জন্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানববংশ রক্ষা করা।
যৌন প্রেরণার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য মানববংশ বৃদ্ধির সঙ্গে দেহের প্রতিটি অঙ্গ স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে তৎপর। নারী দেহের বৃহত্তম অংশ গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মানোর উদ্দেশ্যেই সৃষ্ট।
মা হাওয়া (আ.) সহ পৃথিবীর সমস্ত নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানব বংশ রক্ষা ও সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে পারিবারিক কাঠামোতে সন্তানের সুষ্ঠু লালন-পালন।
আযল-এর বিধান
প্রাচীনকালে আরব সমাজে ‘আযল’করার যে প্রচলন ছিল। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কোনো আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হাদীসে স্পষ্ট আলোচনা আছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হল-
হযরত জাবির (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলের জীবদ্দশায় ‘আযল’করতাম অথচ তখনও কুরআন নাযিল হচ্ছিল। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে ‘আযল’ সম্পর্কে কোনো নিষেধবাণী আসেনি। আর রাসুল (সা.) ও তা নিষেধ করেননি।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি কি সৃষ্টি কর? তুমি কি রিযিক দাও? তাকে তার আসল স্থানেই রাখ, সঠিকভাবে তাকে থাকতে দাও। কেননা এ ব্যাপারে আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়ছালা রয়েছে।’
ইমাম কুরতুবী বলেছেন, ছাহাবীগণ রাসুল (সা.) এর উক্ত কথা থেকে নিষেধই বুঝেছিলেন। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় রাসুল (সা.) যেন বলেছেন, তোমরা ‘আযল’কর না, তা না করাই তোমাদের কর্তব্য।’
রাগিব ইসফাহানীর মতে, ‘আযল’করে শুক্র বিনষ্ট করা এবং তাকে তার আসল স্থানে নিক্ষেপ না করা সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ।
মুয়াত্তা গ্রন্থ প্রণেতা ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ইবনে ওমর (রা.) ছিলেন তাদের অন্যতম যারা ‘আযল’পসন্দ করতেন না।
عزل অর্থ হল, পুরুষাঙ্গ স্ত্রী অঙ্গের ভেতর থেকে বের করে নেওয়া যেন শুক্র স্ত্রী অঙ্গের ভেতরে স্খলিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে স্খলিত হয়। (

আইয়ামে জাহেলিয়াতে যেসব কারণে সন্তান হত্যা করা হত, বর্তমান যামানায় জন্মনিয়ন্ত্রণও ঠিক একই কারণে গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু সোনালী যুগের ‘আযল’ এর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে যুগে তিনটি কারণে মুসলমানদের মধ্যে ‘আযল’এর প্রচলন ছিল।
(এক) দাসীর গর্ভে নিজের কোন সন্তান জন্মানো তাঁরা পসন্দ করতেন না, সামাজিক হীনতার কারণে। (দুই) দাসীর গর্ভে কারো সন্তান জন্মালে ওই সন্তানের মাকে হস্তান্তর করা যাবে না, অথচ স্থায়ীভাবে দাসীকে নিজের কাছে রেখে দিতেও তারা প্রস্ত্তত ছিল না। (তিন) দুগ্ধপায়ী শিশুর মা পুনরায় গর্ভ ধারণ করার ফলে প্রথম শিশুর স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা অথবা পুনরায় সন্তান গর্ভে ধারণ করলে মায়ের স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের আশঙ্কা, কিংবা সন্তান প্রসবের কষ্ট সহ্য করার অনুপযুক্ত তা চিকিৎসকের পরামর্শে যথাযোগ্য বিবেচনায় এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
উপরোক্ত তিনটি কারণের মধ্যে প্রথম দু’টি কারণ আধুনিক যুগে বিলুপ্ত হয়েছে। শেষের তিন নম্বর কারণ ব্যতিরেকে সম্পদ সাশ্রয়ের জন্য ও নিজের আমোদ-প্রমোদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ করা বৈধ নয়।

পরিশেষে বলব, জন্মনিয়ন্ত্রণ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সমস্যার প্রকৃত সমাধান নয়। বরং জনসংখ্যাকে দক্ষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তর ও উৎপাদন বাড়ানো, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপকরণাদির উন্নয়ণের মধ্যেই রয়েছে এ সমস্যার প্রকৃত সমাধান।

 

Related Articles

Back to top button