গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনো কেন করবেন?
স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় ন্যূনতম দুবার আল্ট্রাসনো করা উচিত। গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনো কেন করবেন তা নিয়ে আজকে আমার লেখা।
গর্ভাবস্থায় সনোগ্রাফি (আল্ট্রাসনো) পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না বা থাকলেও তা কখন করা উচিত তা নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় আছে। কিছু কিছু চিকিৎসকের মতে, ক্লিনিক্যালি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার জন্য এই পরীক্ষা জরুরি নয়। আবার অনেকের মতে, এমন কিছু জটিলতা আছে, যা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে সনোগ্রাফি একটি অন্যতম মাধ্যম, যা শুধু শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা দুরূহ।
গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনো কেন করবেন?
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় ন্যূনতম দুবার এই পরীক্ষাটি করা উচিত। কিন্তু তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করা হলে যেমন তথ্যবহুল হয়, আবার অসময়ে বারবার না করে ব্যয়ও সংকোচন করা যায়। নির্ধারিত সময়সীমা দুটি হলো : গর্ভাবস্থার ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে (শেষ মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে সপ্তাহ গণনা করা হয়) ও গর্ভাবস্থার ৩২-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে। এ ছাড়া ১৮ সপ্তাহের আগে আলট্রাসনোগ্রাফি করাও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্ব্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় সহবাসের নিয়ম
১৮-২২ সপ্তাহ
♦ ভ্রূণের সঠিক বয়স নির্ণয় হয়।
♦ জরায়ুতে এপটিক ভ্রূণের অবস্থান আছে কি না জানা যায়।
♦ শিশুর শারীরিক জটিলতা বা বিকলাঙ্গতা নির্ণয় করা যায়।
♦ জরায়ুতে ফুলের অবস্থান নির্ণয় করা যায় এবং মায়ের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ কি না তা জানা যায়।
♦ জরায়ুতে টিউমার বা অন্য কোনো জটিলতা রয়েছে কি না অথবা থাকলেও তা প্রসবে জটিলতা সৃষ্টি করবে কি না এসব জানা যায়।
গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কি হয়
৩২-৩৬ সপ্তাহ
♦ শিশুর বৃদ্ধি জটিলতা আছে কি না তা জানা যায়।
♦ শিশুর বিকলাঙ্গতা নিরূপণ করা যায়, যা প্রথম আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে নির্ণয় হয় না।
♦ গর্ভের শিশুর প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
♦ জরায়ুতে সঠিক অবস্থান জানা যায়।
♦ জরায়ুর পানির পরিমাপ করা যায়।
♦ অন্যান্য জটিলতা, যেমন ফাইব্রয়েও, ওভারিয়ান টিউমার ইত্যাদি নিরূপণ করা যায়।
১৮ সপ্তাহের আগে
১৮ সপ্তাহের আগে আলট্রাসনোগ্রাফি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে তা বেশ গুরুত্ব্বপূর্ণও। যেমন :
♦ পজিটিভ স্টিক টেস্ট সব সময় গ্রহণযোগ্য নয়। কিছু হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় এটা পজিটিভ (দুই দাগ) হতে পারে। অর্থাৎ স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা প্রমাণের জন্য পজিটিভ টেস্ট যথেষ্ট নয়।
♦ গর্ভের সঠিক বয়স নির্ণয় করা যায়।
♦ ভ্রূণের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। যেমন—জরায়ুর ভেতরে না বাইরে (এক্টোপিক প্রেগনেন্সি)।
♦ ভ্রূণের সংখ্যা নির্ণয় হয় (এক বা একাধিক)।
♦ মোলার প্রেগন্যান্সি কি না তা যাচাই করা যায়।
♦ তলপেটের কোনো টিউমার যা কি না গর্ভধারণের মতো উপসর্গ প্রকাশ করে তা চিহ্নিত হয়।
♦ এ ছাড়া কোনো জরায়ু বা ওভারিয়ান টিউমার আছে কি না বা শিশুর সঠিক বৃদ্ধি বা স্বাভাবিক প্রস্রাবের অন্তরাল ইত্যাদি চিহ্নিত করা।
মূলত আল্ট্রাসনোগ্রাফি এমন একটি পরীক্ষা, যা সঠিক সময়ে, উত্কৃষ্ট পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে একটি সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়া যায়। এই পরীক্ষাটি সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতিতে করার মাধ্যমে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানো সম্ভব।