মানসিক স্বাস্থ্যস্বাস্থ্য টিপস

দৈনিক যে ১০টি ভুলে আপনি হচ্ছেন মানসিক চাপ ও অশান্তির শিকার!

একটা জিনিস আমরা সবাই জানি, আর তা হলো, আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আছেই। এখন সময়টাই এমন যে আমরা সারাক্ষণ রীতিমত দৌড়ের ওপরে থাকি।

এ কারণে কমবেশি চাপের মাঝে আমাদের থাকতেই হয়। এই স্ট্রেস নিয়েই বাঁচতে হবে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে আমরা এমন কিছু করে চলছি যার ফলে অযথাই বেড়ে চলেছে এই মানসিক চাপ ও অশান্তি। ফলশ্রুতিতে একটা সময়ে আমাদের পুরো জীবন হয়ে পড়ছে বিপর্যস্তও। ঠিক কী কী ভুল করার ফলে নিজেদের জীবনে এই স্ট্রেস আমরা ডেকে আনছি? আসুন জেনে নেই।

সর্বক্ষণ অনলাইন থাকা:

কাজের খাতিরেই হোক আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার জন্যেই হোক, আমরা অনেকেই অষ্টপ্রহর অনলাইন হয়ে থাকি। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, নেটবুক, ট্যাব, স্মার্টফোন এসবের কল্যাণে সারাদিন-রাত অনলাইন থাকা কোন ব্যাপারই না। কিন্তু এসব যন্ত্রের সাথে প্রতিনিয়ত বাসের ফলে আমাদের মানসিক চাপ বেড়েই চলেছে।

একটি গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মাঝে দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষ দিনে গড়ে ১৬ ঘণ্টা অনলাইনে থাকবে। এত বেশি সময় অনলাইন থাকার ফলে বাড়ছে স্ট্রেস, বিষণ্ণতা এবং একাকীত্বের মত সমস্যাগুলো। স্ট্রেস কমাতে চাইলে আপনার ডিভাইস থেকে দূরে সময় ব্যয় করতে শিখুন। যতক্ষণ অনলাইন না থাকলেই নয়, শুধু সেটুকু সময় অনলাইন থাকুন।

সব অনুভূতি নিজের মাঝে জমিয়ে রাখা:

রাগ, ক্ষোভ, হতাশাগুলো অন্যর সামনে প্রকাশ করতে চান না অনেকেই। এর ফলে নেতিবাচক এসব অনুভূতি মনের মাঝে জমে উঠতে থাকে। বিশেষ করে যখন কান্না পায়, তখন কান্না চেপে রাখার ফলে প্রচণ্ড রকমের স্ট্রেস বেড়ে যায়। ক্ষতি হয় শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের। এসব পরিস্থিতি এড়িয়ে যাবেন না। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন।

অলসতায় সময় কাটানো:

আপনি যদি শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকেন, তবে স্ট্রেস আরও জেঁকে বসবে আপনার উপরে। গবেষণায় দেখা যায়, ব্যায়াম কম করলে যেমন স্বাস্থ্যের উন্নতি বাধা পায় তেমনি স্ট্রেসও বেশি জমা হতে থাকে। ব্যায়ামের ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ কমে এবং সার্বিকভাবে মন-মেজাজ ভালো থাকে।

অর্থের পেছনে ছুটতে থাকা:

অর্থই অকল অনর্থের মূল- এ কথা হয়তো পুরোপুরি সত্য নয়। কিন্তু দেখা যায়, আর্থিক অবস্থা ভালো হবার পরেও অনেকে নিজের আনন্দের জন্য সে অর্থ ব্যয় করে কমই। মানুষ যখন টাকার পেছনে ছুটে নিজের সুখ বিসর্জন দেয়, তখন জীবন স্ট্রেসে ভরে থাকাটাই স্বাভাবিক।

নিখুঁত হবার চেষ্টা:

সবকিছুই ঠিকভাবে করতে হবে। একচুল এদিক ওদিক হতে পারবে না। এমন খুঁতখুঁতে মানুষ কিন্তু পৃথিবীতে কম নেই। এসব মানুষ নিজের এই খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে নিজেরাই নিজেদেরকে ফেলছেন অহেতুক স্ট্রেসের মাঝে।

সবকিছু নিয়ে বেশি চিন্তা করা:

একটা ঘটনা ঘটে যাবার পর তা নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ আছে? কি করলে এই ঘটনা ঘটতো না, তা ভেবে তো লাভ নেই। যে পরিস্থিতির ওপরে আপনার কোনো হাত নেই, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেও নিজেকে স্ট্রেসের মাঝে রাখেন অনেকেই।

এতে আমাদের মন যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে থাকে, তেমনি জীবনকেও আমরা উপভোগ করতে পারি না। স্ট্রেস কমাতে হলে অবশ্যই এমন অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে হবে।

শপিং:

অনেকের কাছেই মনে হয় মন ভালো করার একটা নির্দোষ উপায় হলো হালকা শপিং করা। কিন্তু শপিং করতে গিয়ে অনেকেই উল্টো নিজেকে আরও বেশি স্ট্রেসের মাঝে ফেলেন। তাই স্ট্রেস কমাতে শপিং এর সাহায্য না নেওয়াই ভালো।

অন্য মানুষের স্ট্রেস নিজের কাঁধে নেওয়া:

আপনার বন্ধু অথবা পরিবারের কেউ যদি স্ট্রেসে থাকে, তবে অনেক বড় সম্ভাবনা আছে যে সেই স্ট্রেস আপনার মাঝেও দেখা দেবে। ভালো বন্ধু হিসেবে তাদের উপকার করতে গিয়ে আপনি নিজেই হতে পারেন সেকেন্ডহ্যান্ড স্ট্রেসের রোগী।

এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে আমাদের দরকার প্রথমেই নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং দূর থেকে সেই ব্যক্তির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

প্রয়োজনের চাইতে কম ঘুমানো:

বেচে থাকার জন্য যে নিয়মিত ঘুমের প্রয়োজন এটা অনেকেই মেনে চলেন না। অনিয়মিত এবং কম ঘুমের কারণে অনেক বেশি স্ট্রেস পড়ে আমাদের শরীর ও মনের ওপরে। স্ট্রেস কমিয়ে আনতে চাইলে একটু নিয়ম করে, একটু বেশি সময় ঘুমিয়ে নিন।

আর্থিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না রাখা:

নিজের অর্থ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আপনার জীবন ধারণ যেমন কষ্টকর হয়ে যাবে তেমনি এ নিয়ে অনেকটা স্ট্রেস জমা হবে আপনার মাঝে। এর জন্য আপনাকে বিরাট ধনি হতে হবে না। বরং এমনভাবে খরচ করতে শিখুন যাতে আপনাকে অসময়ে কোনো টানাটানিতে পড়তে না হয়।

Related Articles

Back to top button