রোগ ব্যাধি

শ্বেতী রোগ – এটা কোন ছোয়াচে রোগ নয়, কোন অভিশাপও নয়

শ্বেতী রোগীদের বিড়ম্বনা

অথচ এটা কোন ছোয়াচে রোগ

নয়, কোন অভিশাপও নয়
শ্বেতী রোগদেশের খ্যাতিমান চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এমইউ কবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল ভিটিলাইগো এন্ড সোরিয়াসিস ভাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে। কিছু নিবেদিত চিকিত্সক ও সমাজকর্মী এ অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন। আমিও একজন সামান্য কর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আছি। যদিও আমরা এ বছরের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। এখনও ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিতে পারিনি। দেশের অন্তত:১৫ থেকে ২০ লক্ষ ভিটিলাইগো বা শ্বেতী রোগী রয়েছে। এদের মধ্যে তরুণী-মহিলাদের শ্বেতী নামক এ সমস্যাটি হলে যে কি ধরণের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তা কেবল ভূক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাই জানেন। যদিও শ্বেতী কোন ছোয়াচে রোগ নয়, কোন অভিশাপের বা পাপের ফসলও নয়। যদিও এ ধরণের কুসংস্কার কম নয়। যেহেতু আমরা ভিটিলাইগো রোগীদের সঙ্গে কাজ করছি সে কারণে অনেকে নানা প্রশ্ন করেন। জানতে চান নানা তথ্য। আমি এক্ষেত্রে তিনটি ঘটনার বিবরণ দেবো। এতে শ্বেতী সমস্যার বিড়ম্বনা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে।

: অতি সম্প্রতি দেশের একজন স্বনামধন্য গবেষক, শিক্ষাদ্যোক্তা যিনি স্বাস্থ্য সেক্টরে অভাবনীয় সাফল্য অজর্ন করেছেন এমন একজন গুণী ও কৃতি মহিলার কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কাছে জাতীয় শ্বেতী ফাউন্ডেশন গঠনের উদ্দেশ্য জেনে বেশ খুশী হলেন এবং উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করলেন ঠিকই কিন্তু তার উত্কণ্ঠাটা রয়ে গেলো আসলে শ্বেতী রোগীদের কোন কাংখিত চিকিত্সা দেয়া সম্ভব কিনা। এক পর্যায়ে এই বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও গবেষক শোনালেন একটা বেদনাদায়ক কথা। তিনি একটি স্বনামধন্য বিউটি পারলারে গিয়ে থাকেন। সঙ্গে থাকে সহকর্মী মহিলা। তার সহকর্মী পেডিকিউর করাবেন। এমন সময় বিউটি পারলারের বিউটিশিয়ানদের নজরে পড়ে নারী উদ্যোক্তার সহকর্মীর পায়ে সাদা দাগ। বিউটিশিয়ানরা একে একে সবাই বেকে বসলেন সাদা দাগ ওয়ালা ভদ্রমহিলার পায়ে যত্ন বা পেডিকিওর করবেন না। অবশ্য একজন মাঝারী বয়স্ক ও অভিজ্ঞ মহিলা এগিয়ে এলেন।

দুই: সপ্তাহ খানেক আগে এক ভদ্র মহিলা ফোন করলেন। বললেন, ডাক্তার সাহেব আপনিতো ইত্তেফাকে প্রতিদিন নানা বিষয়ে হেলথ টিপস লেখেন। হেলথ টিপসের তিনি একজন পাঠক ইত্যাদি ইত্যাদি। হেলথ টিপসের অনেক পাঠকই আমাকে ফোন করেন। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এই ভদ্র মহিলার ফোনের বিষয়টি ছিলো খানিকটা ব্যতিক্রম। মহিলা জানতে চাইলেন তার ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে। ওদের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের জানাশোনা। এখন তার ছেলে ঐ পছন্দের মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু মেয়েটির মা ও খালার শরীরে সাদা দাগ আছে। এখন ছেলের পছন্দকরা মেয়েটিকে ভবিষ্যতে শ্বেতী হবার সম্ভাবনা আছে কিনা। যদি তার হবু পুত্র বধুর শ্বেতী হবার সম্ভাবনা থাকে তবে ছেলের সঙ্গে ঐ মেয়েটির বিয়ে তিনি দেবেন না। একজন চর্মরোগ ও শ্বেতী বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে যে উত্তরটা দেয়া প্রয়োজন তাই দিলাম। মহিলা হয়তো সাময়িকভাবে খুশী হলেন। কিন্তু তার উত্কণ্ঠা কমাতে পারলামনা। তিনি যদি নেগেটিভ উত্তর পেতেন তা হলে বিয়েটা ভেঙ্গে যেতো। ছেলের পছন্দ, দীর্ঘ দিনে সম্পর্ক এখানে কোন কাজেই আসতো না।

তিন: সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। আমার চেম্বারে এসে বললেন, বাবা আমাকে বাচান। আমার ছেলের বিয়ে সামনে। সচিব সাহেবের কপালে হালকা একটা সাদা স্পট (হেয়ার লাইন বরাবর)। সচিব সাহেবের আশংকা পাত্রী পক্ষ তার কপালের এই সামান্য সাদা দাগ দেখলে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে। যদিও (হেয়ার লাইনের এই সামান্য দাগ) স্পট বা হাইপো পিগমেন্টেটড দাগ চুল না উঠালে দেখা যায়না।

উপরের তিনটি ঘটনা থেকে আমাদের দেশে শ্বেতী রোগীদের বিড়ম্বনার সামান্য চিত্র পাওয়া যাবে। আমরা বহুবার বলেছি শ্বেতী কোন ছোয়াচে রোগ নয়, কোন ক্ষতিকরও নয়। দেশের মানুষকে এ সহজ কথাটি বুঝাতে পারলে এবং শ্বেতী রোগীদের জন্য উন্নত চিকিত্সার ব্যবস্থা করা গেলে দেশের হাজার হাজার শ্বেতী রোগী বিশেষ করে মহিলাগণ বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Related Articles

Back to top button