খাদ্য ও পুষ্টিজেনে রাখুনস্বাস্থ্য টিপস

মসলা কি আসলেই খারাপ ? না এর ভাল উপকারও আছে ?

রান্নায় নানা ধরনের মসলার ব্যবহার প্রাচ্য থেকেই সারা বিশ্বের মানুষ শিখেছে। একসময় ভারত উপমহাদেশ থেকে বিচিত্র ধরনের মসলা সারা দুনিয়ায় রপ্তানি হতো। ঐতিহ্যবাহী ‘স্পাইসি ইন্ডিয়ান ফুড’ বা ভারতীয় মসলাদার খাবার আজও দুনিয়াকে মাতিয়ে রেখেছে। কিন্তু বলা হয়ে থাকে যে বেশি মসলা খাওয়া ভালো নয়। মসলা খেলে পেটে গ্যাস হয়, বদহজম হয় বা গলা জ্বলে। খাবারে যত কম মসলা ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। কিন্তু আসলেই কি মসলার এত দোষ? বিজ্ঞান কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে।

রসুনের অনেক গুণ
অ্যালিল গোত্রের উদ্ভিদ রসুনে রয়েছে নানা ধরনের সালফার যৌগ। আর রক্তনালি, হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতায়, কি দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঙ্গে লড়াই—এ সালফার যৌগ নিয়ে বিজ্ঞানীদের রয়েছে অসীম আগ্রহ। বলা হয় যে এর অ্যালিসিন নামের উপাদান দেহের অ্যানজিওটেনসিন ২-এর কার্যকারিতাকে রোধ করে উচ্চ রক্তচাপ কমায়।

অ্যাজোইন রক্তনালির ভেতর রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক হলো যে এর পলিসালফাইড যৌগ লোহিত রক্তকণিকার ভেতর গিয়ে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসে রূপান্তরিত হয়, যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। ফলে হৃদ্রোগ প্রতিরোধ করে।

আদার রকমারি
আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় আদা হলো প্রথমত কারমিনেটিভ, অর্থাৎ পেটে গ্যাস কমায়, দ্বিতীয়ত স্পাসমোলাইটিক, মানে খাদ্যনালির সংকোচন কমায়। এর প্রমাণ মিলেছে নানা গবেষণায়। যাত্রাজনিত বমি ভাব কমাতে ও গর্ভকালে মর্নিং সিকনেসে আদা উপকারী ভূমিকা রাখে।

এর জিনজেরল নামের উপাদান বাত রোগীদের ব্যথা ও প্রদাহ কমায়। ২০০৩ সালে লাইফ সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় যে ৬-জিনজেরল ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস করে ও দেহের বিভিন্ন প্রদাহ কমায়। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা প্রমাণ করেছেন যে অন্ত্রের ক্যানসার রোধেও আদা উপকারী।

পেঁয়াজ কিন্তু কাঁদাবে না
রসুনের মতো পেঁয়াজও অ্যালিল গোত্রের উদ্ভিদ, মানে এতেও আছে নানা সালফার যৌগ, যা রক্তনালির সুস্থতার জন্য ভালো। এ ছাড়া এতে আছে পলিফেনল নামের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুয়েরসেটিন, যা আজকাল পাশ্চাত্যে ভিটামিন বড়ি আকারে বিক্রি হচ্ছে।

এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় ও হাড়-সন্ধির সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। দীর্ঘদিনের বাত ব্যথাও কমায়। পেঁয়াজের ফোলা অংশে থাকে অনিয়নিন এ নামের উপাদান, যা রক্তের ম্যাক্রোফেজকে বাধা দিয়ে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

মরিচে অ্যাসিডিটি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্যাস্ট্রিক আলসারের মূল কারণ হেলিকোবেকটার পাইলোরি নামের একধরনের জীবাণু, তাই মরিচ বা মসলাকেই প্রাথমিকভাবে দায়ী করা ঠিক নয়। তবে আলসারের রোগীর পাকস্থলীর বহিঃত্বককে ব্যাহত করে বলেই ঝাল খেলে গলা-পেট জ্বলতে পারে। তবে মরিচে ক্যাপসেইসিন নামের যে উপাদান রয়েছে, তা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঝাল মরিচ বিপাক ক্রিয়াকে চালু করে ভীষণভাবে, বন্ধ নাক ও সাইনাস খুলে দেয়, মস্তিষ্কের রোগ প্রতিহত করে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Related Articles

Back to top button