বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকের তারুণ্য দীর্ঘদিন ধরে রাখবেন যেভাবে
সময়ের অগ্রগতির সাথে আমাদের বয়সও অনিবার্যভাবে বৃদ্ধি পায়। যেমন আমরা সময়কে থামিয়ে রাখতে পারি না, তেমনই বয়সের গতিও রোধ করা সম্ভব নয়; দুটোই অবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে চলে। মসৃণ এবং সুন্দর ত্বক সকলের আকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। প্রত্যেকেই চায় তারুণ্যময় ত্বক ধরে রাখতে।
তবে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বয়স বৃদ্ধিই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এর সাথে ত্বকের পরিবর্তনও ঘটে থাকে। যদিও বয়সের ছাপ সম্পূর্ণ রূপে থামানো সম্ভব নয়, তবে তা ধীরগতিতে আনা যায়। কীভাবে? কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস প্রতিনিয়ত মেনে চলার মাধ্যমে সহজেই ত্বকের তারুণ্য এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
আজকের ফিচারে আমরা সেই দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো নিয়ে আলোচনা করব যা অনুসরণ করলে আপনি সহজেই আপনার ত্বকের তারুণ্য দীর্ঘায়িত করতে পারবেন।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার ৮টি অভ্যাস
অনেকে মনে করেন যে বয়সের চিহ্ন দূর করার জন্য কেবলমাত্র কিছু পণ্যই কার্যকর হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, বিষয়টি এতটা সরল নয়। ত্বকের যত্ন নেওয়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর পাশাপাশি কিছু সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলাও অপরিহার্য। আসুন জেনে নিই সেই অভ্যাসগুলোর বিস্তারিত বিবরণ।
১. বিশুদ্ধ পানি পান করা
ত্বক ও শরীরকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। তবে, এটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি যে পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে। অনেকের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে যত বেশি পানি পান করা হয়, ততই ভালো কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল। সবার উচিত দেহের চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণমতো পানি পান করা। এটি মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, যেমন পানির অভাব ত্বক ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই অতিরিক্ত পানি পান করাও স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রতিদিন চেষ্টা করুন অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি গ্রহণ করতে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখে এবং খাদ্য পরিপাক ক্রিয়াতে সহায়ক হয়। যখন দেহে পানির ঘাটতি থাকে না, তখন ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২. প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও ফল খাওয়া
আমরা সবাই অবগত যে, ফলমূলে বিদ্যমান বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদানসমূহ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। বিভিন্ন প্রকারের ফল ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধি করে, যা ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে সহায়ক। সুতরাং প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একটি ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যিক বলা চলে। আপনি যেকোনো প্রকারের ফল উপভোগ করতে পারেন, যেমন মৌসুমি ফল, কলা, সফেদা এবং পেঁপে। ত্বকের তারুণ্য অটুট রাখতে প্রতিদিন ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিছুদিন নিয়মিত এই অভ্যাস বজায় রাখার পর আপনি নিজেই এর ইতিবাচক পরিবর্তন পরিস্কারভাবে অনুভব করবেন।
৩. প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখা
শাকসবজির গুরুত্ব আমাদের জীবনে অপরিসীম। এতে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সমৃদ্ধ পরিমাণে বিদ্যমান। প্রতিদিন পর্যাপ্ত শাকসবজি গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি কেবল শরীরকে সুস্থ রাখতে পারবেন না, বরং ধীরে ধীরে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিও লক্ষ্য করবেন, যা আপনাকে আরও তরুণ দেখাবে। অতএব, নিয়মিতভাবে বেশি বেশি সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৪. চিনিযুক্ত ও কার্বোনেটেড সফট ড্রিংকস এড়িয়ে চলা
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়, যেমন ফলের রস বা কার্বণমিশ্রিত সফট ড্রিংকস, ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি ত্বকের কোলাজেন বিনষ্ট করে। এ ধরনের পানীয়ের পরিবর্তে বাসায় তৈরি অল্প চিনিযুক্ত মিল্কশেক, কফি, আইসড টি বা ইয়োগার্ট শেক গ্রহণ করা যেতে পারে।
৫. বাইরের অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা
বাহিরের খাদ্যসমূহ প্রায়শই স্বাস্থ্যকর নয় এবং এতে অতিরিক্ত মসলা, লবণ, চিনি ও তেল বিদ্যমান থাকে। এসব প্রসেসড খাবারের বেশিমাত্রায় সেবন করা যেমন শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে, তেমনি অ্যাসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাইরের খাবার গ্রহণের অভ্যাস ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলা সমীচীন। একই সাথে ভাজাপোড়া খাবার ও প্যাকেটজাত খাদ্যের পরিমাণও হ্রাস করা প্রয়োজন। সবসময় ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
৬. প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে বাদাম খাওয়া
প্রতিদিন যে কোনও ধরনের বাদাম গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন। একমুঠো চিনা বাদাম অথবা কয়েকটি কাঠবাদাম, কাজুবাদামের মতো খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করুন আপনার দৈনন্দিন ডায়েটে। বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, অপরিহার্য ফ্যাট এবং তেল যা ত্বককে মসৃণ ও দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে, ফলে আপনাকে দীর্ঘকাল যৌবন ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সুতরাং, নিয়মিতভাবে বাদাম বা বাদামজাতীয় খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস তৈরি করুন।
৭. লাইফ থেকে স্ট্রেস দূর করা
মানুষের জীবনে চাপ, জটিলতা ও উত্তেজনা স্বাভাবিকই। তবে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমিয়ে আনন্দময় জীবনযাপনের চেষ্টা করা উচিত। যে ব্যক্তিরা আপনার জীবনে স্ট্রেস বাড়ায় এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপ ত্বকের আগাম বার্ধক্যের কারণ হতে পারে। তাই হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন এবং জীবনকে ভালোবাসুন। মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকলে ত্বকের সৌন্দর্যও অক্ষুণ্ণ থাকবে।
৮. অতিরিক্ত রাত জাগার অভ্যাস থাকলে ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলা
ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের দেহকে পুনরায় কর্মক্ষম করে তোলে। ঘুমের সময় ত্বকের কোষগুলো পুনর্গঠিত হয় এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও ধীরে ধীরে নিরাময় হতে পারে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অপরিহার্য। অতিরিক্ত রাত জাগা শরীরের উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে চোখের চারপাশে কালো দাগ, চোখ গর্তে চলে যাওয়া এবং ত্বকের মলিনতা দেখা দেয়। সুতরাং, ত্বকের সতেজতা ও তারুণ্য রক্ষার্থে অতিরিক্ত রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন এবং দ্রুত ঘুমানোর নিয়ম তৈরি করুন।
এই অভ্যাসগুলো কিছুদিন মেনে চললেই যে ত্বকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন, তা ঠিক নয়। বরং ধৈর্য সহকারে আপনাকে নিয়মিত এই অভ্যাসগুলো মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি বেসিক স্কিন কেয়ারও অত্যন্ত জরুরি।
স্কিন কেয়ারের মৌলিক নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে এবং সানস্ক্রিন যেটিতে এসপিএফ রয়েছে, তা দিনের বেলা নিয়মিত প্রয়োগ ও পুনঃপ্রয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র এভাবেই আপনি আপনার ত্বকের তারুণ্য দীর্ঘস্থায়ী রাখতে সক্ষম হবেন।