হাতের তালুর খসখসে ভাব দূর করার উপায়
একজন আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন হাতের তালুর খসখসে ভাব দূর করার উপায়। আজ আমরা তা নিয়ে লিখলাম।
হাতের তালুর খসখসে ভাব দূর করার উপায়
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন বলেন, শীতে কারও কারও ত্বক অতিরিক্ত ফেটে যায়। অতিরিক্ত ত্বক ফাটার সমস্যা হতে পারে জন্মগত কারণে। আবার কিছু রোগের কারণেও এমন হতে পারে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরও অতিরিক্ত ত্বক ফাটলে বুঝতে হবে কোনো সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* বংশগত বা জিনগত কারণে, বয়স ৪০-এর পর তেল ও ঘাম গ্রন্থির সংখ্যা কমে যায়।
* পেশার কারণে। যেমন বাগান, কৃষিকাজ বা নির্মাণকাজ যাঁরা করেন।
* ক্লোরিনযুক্ত পানিতে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা গোসল করলে, বিশেষ করে গরম পানি বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে, ধূমপান, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন গ্রহণ, অতিরিক্ত আকাশপথে ভ্রমণ।
* ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’র অভাব হলে। জিংক ও ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক হয়।
* কিছু চর্মরোগ, কিছু ওষুধ সেবন, এসিতে অতিরিক্ত অবস্থান, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদিও ত্বক শুষ্ক করে।প্রতিকার কীভাবে?
* ত্বক শুষ্ক হওয়ার প্রকৃত কারণ বের করুন।
* ত্বক যাতে শুষ্ক না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে নিন।
* ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
* প্রচুর পানি খাবেন। নরম সুতির আরামদায়ক পোশাক পরার চেষ্টা করবেন।
হাতের তালু ও পায়ের তলার যত্ন
* এ সময় ১০ শতাংশ ইউরিয়া, ভেসলিন লাগালে হাতের তালু অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। শীতে অনেকের পায়ের তলা ফেটে যায়।
* ৫ শতাংশ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট অথবা ভেসলিন নিয়মিত মাখতে পারেন।
মুখের যত্ন
ভালো ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের ব্রণের সমস্যা আছে, তাঁরা ক্রিমের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে নিতে পারেন।
শীত আসছে বলে ভাববেন না যে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ঠোঁটের যত্ন
* ঠান্ডা বাতাসে ঠোঁট বারবার ফেটে যায়। কখনো এতটাই ফেটে যায় যে চামড়া উঠে আসে ও রক্ত বের হয়। কখনোই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়।
* কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন। ঠোঁটের জন্য ভালো কোনো প্রসাধনী ব্যাগে রাখুন এবং দিনে তিন-চারবার লাগাতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন
* নারকেল তেল আক্রান্ত জায়গায় ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
* অ্যালোভেরা জেল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
* প্রচুর শাকসবজি খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খান। ত্বকের পরিচর্যা করুন।
* যাঁদের পুরোনো চর্মরোগ যেমন সোরিয়াসিস, একজিমা, ইকথায়সিস ইত্যাদি আছে, তাঁদের ত্বকের সমস্যা এই সময় বেড়ে যেতে পারে। তাই তাঁদের হতে হবে আরও সচেতন। প্রয়োজনে আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কারও কারও বংশগতভাবেই এমনটা হয়ে থাকে অর্থাৎ কিছূটা শক্ত আর খসখসে টাইপের। সেক্ষেত্রে তেমন কিছূই করার নেই। এছাড়া শুষ্কতাজনিত কারণে যদি এমনটা সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে কিছুটা যত্নের মাধ্যমে খসখসেভাব কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আলমন্ড অয়েল ও তিলের তেলের একটি মিশ্রণে হাতের তালুর যত্ন নিতে পারেন। লেবু ও মধুর মিশ্রণ, ডিমের সাদা অংশের সাথে দুধ ও মধুর মিশ্রণ, পাকা কলা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া হালকা গরম পানির সাথে লবণ এবং শ্যাম্পু মিশিয়েও হাতের তালূর পরিচর্যা করতে পারেন। এতে করে আপনার ফাটা ত্বকের সমস্যা মিটিয়ে হাতের তালুর ত্বকটি মসৃণ আর নমনীয় হয়ে উঠবে এবং খসখসে ভাব দূর করবে।
অলিভ অয়েল খুবই কার্যকরী। প্রতিবার হাত ধোবার পর হাত মুছে হাতে ও নখে অল্প করে অলিভ অয়েল মালিশ করে নিন। একটু ঝামেলা মনে হলেও প্রতিবার করতে থাকলে হাত অনেক কোমল থাকে। এবং ঘুমোতে যাবার আগে পুরো হাতেপায়ে এক চা চামচ অলিভ অয়েল এর সাথে তিন/চার ফোটা আমন্ড অয়েল এর মিশ্রন ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বককেও এটি খুব ভালভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। আমি সারাবছরই এটি ব্যবহার করি। শীতে প্রয়োজনে বেশীবার ব্যবহার করা যেতে পারে।