দৈনিক খবর

নতুন লজ্জার মুখে বাংলাদেশ:রাষ্ট্রদূতকে অস্ট্রিয়ার সরাসরি ‘না’, মোমেনের দেয়া একটি চিঠি নিয়ে নানা আলোচনা

বাংলাদেশ আবারো পড়েছে নতুন আলোচনার মুখে। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হয় অস্ট্রিয়াকে। কিন্তু নজিরবিহীন ভাবে তারা এই রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করার বিষয়টি একেবারেই প্রত্যাখ্যান করে। আর ঘটনাটি নজিরবিহীন এবং অস্বাভাবিক। এ বিষয়ে আবদুল মোমেন সাফাই গেয়ে চিঠি দিলেও তা নাকচ হয়ে যায়। ৬ মাসের চেষ্টা ও তদবির ব্যর্থ হয়েছে। ইউরোপীয় দেশ অস্ট্রিয়ায় পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয় পেশাদার কূটনীতিক মো. তৌহিদুল ইসলাম।

কিন্তু ভিয়েনা তাকে গ্রহণ করেনি। জানা যায়, বহু বছর আগে ইতালির মিলানে কনসাল জেনারেল থাকাকালে তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অধস্তন এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। অস্ট্রিয়ান সরকার অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা. ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গেছে, ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যানের অন্যতম কারণ হতে পারে। অস্ট্রিয়ার ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রীর কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের চিঠিতে মিঃ ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপক তদন্তের বিশদ বিবরণ রয়েছে যে তাকে পদোন্নতি এবং পদায়ন দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রদূত গ্রহণে অস্বীকৃতির কারণে সেগুনবাগিচা ওই গুরুত্বপূর্ণ মিশনে নতুন রাষ্ট্রদূত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির অনুলিপি পেয়েছে হিউম্যান ল্যান্ড। যেখানে দেখা যায়, অস্ট্রিয়ার ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী আলেকজান্ডার সোলেনবার্গকে লেখা চিঠিতে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। খন্ডন করা হয়েছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশী মিডিয়ার বিরুদ্ধে তাকে “ন্যায়সঙ্গত” করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন স্বীকার করেছেন যে তার চিঠি সত্ত্বেও রাষ্ট্রদূত গ্রহণ না করায় তিনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন মানবজমিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হয়েছে, তার দোষ প্রমাণিত হয়নি। বিষয়টি অস্ট্রিয়ান সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা তাকে গ্রহণ করেনি। অস্ট্রিয়ান সরকার কি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠির জবাব দিয়েছে? জানতে চাইলে সচিব বলেন, বিব্রত এড়াতে হয়তো তারা চিঠির জবাব দেবেন না। আমরাও এখন নতুন নাম পাঠিয়ে তাদের বিরক্ত করব না। তিনি আরও দাবি করেন, দায়িত্ব নিয়ে মিশন পালনে কোনো অসুবিধা নেই। এদিকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমোদনের চিঠির কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একাধিক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. চিঠির বিস্তারিত শোনার পর শহীদুল হক বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য নেই। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমার ৩২ বছরের চাকরি জীবনে এমন চিঠি দেখিনি। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

মন্ত্রীর চিঠিতে যা বলা হয়েছে-

চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন অস্ট্রিয়ার ফেডারেল মন্ত্রীকে লিখেছেন- স্যার, অস্ট্রিয়ার পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আপনাকে জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। তৌহিদুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টি আপনার বিবেচনার জন্য। তার নিয়োগ প্রস্তাব (অ্যাগ্রিমো) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সম্মানের সাথে তুলে ধরে মন্ত্রী লিখেছেন- বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিতে অভিজ্ঞ তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কূটনীতিক। এ জন্য তিনি অস্ট্রিয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নিউইয়র্কে আমাদের জাতিসংঘ মিশনে (যখন মন্ত্রী মোমেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন) দীর্ঘ চার বছর আমার সাথে কাজ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে একজন দক্ষ ও সফল কূটনীতিক হিসেবে দেখেছি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কূটনীতিতে স্নাতকোত্তর তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় তার ব্যাচের শীর্ষে ছিলেন। একজন কর্মকর্তাকে হেড অব মিশন হিসেবে মনোনীত করা বাংলাদেশে একটি বিশাল কাজ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ব্যক্তিগত আচার-আচরণ এবং সার্ভিস রেকর্ডের উপর ব্যাপক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এটি মন্ত্রণালয় এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়। সব বাধা অতিক্রম করে রাষ্ট্রদূত তাওহিদ ইতালি ও চীনে হেড অব মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গত দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সামাজিক এবং মূলধারার মিডিয়াকে পুঁজি করে, বাংলাদেশে যে কেউ বেপরোয়াভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে। আমাদের অনেক কর্মকর্তা অতীতে মিডিয়ার এসব অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। তবে এসব অভিযোগের প্রতিটিই মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ তদন্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে তাকে পুনর্বহাল করা হয়। একজন পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে, জনাব তাওহিদ তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সকল বাধা অতিক্রম করে একই ধরনের কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছেন। তিনি ডিরেক্টর পদ থেকে (জাতিসংঘের ডি-১ র‌্যাংকের সমতুল্য) মহাপরিচালক (ডি-২) পদে উন্নীত হন। পরে তাকে চীন ও সিঙ্গাপুরে মিশন প্রধান করা হয়। তাই আমি তার উচ্চ নৈতিকতা ও আচরণ সম্পর্কে নিশ্চিত। আমি বিশ্বাস করি তিনি বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়া উভয়ের মঙ্গলের জন্য ভিয়েনায় একজন ভালো রাষ্ট্রদূত হবেন। অস্ট্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত তৌহিদ সম্পর্কে আরও কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে, আমি যেকোনো সময় তা দিতে খুশি হব। আমি এমন একজন প্রতিশ্রুতিশীল রাষ্ট্রদূতকে সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনার সদয় দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় আছি, যাতে তিনি স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং সম্মানের সাথে অস্ট্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে এবং সেবা করতে পারেন।

প্রসঙ্গত,এ দিকে এমন একটি ঘটনা নিয়ে এখন সবখানে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। বিশেষ করে সরকার মহলে শুরু হয়েছে নানা ধরনের গুঞ্জন। একটি রাষ্ট্রদূতকে কি ভাবে আরেকটি রাষ্ট্র এভাবে প্রত্যাখ্যান করে তা নিয়ে উঠছে নানা ধরনের প্রশ্ন।

Related Articles

Back to top button