দৈনিক খবর

সরকারের ইচ্ছের বাইরে বিচার বিভাগ এখন কিছুই করতে পারে না,এ এক নিষ্ঠুর তামাশা:মারুফ

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এক বার নয় তিনি ছিলেন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই খালেদা জিয়াই এখন আইনের মারে পরে গিয়ে রয়েছেন গেলো বেশ কিছু বছর বন্দি অবস্থায়। এ দিকে তাকে নিয়ে রয়েছে এখনো অনেক আলোচনা সমালোচনা। এবার খালেদা জিয়া এবং দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে নতুন একটি লেখনী লিখেছেন বেগম জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ক্ষমতাসীনেরা আবারও হরেক কিসিমের আলাপ জুড়েছে। এ নিয়ে বিএনপি বলেছে যে, তাদের দলের নেত্রীকে নিয়ে সরকারের এতো মাথা ঘামাবার দরকার নেই। কিন্তু বাস্তবে গুরুতর অসুস্থ এবং বন্দী খালেদা জিয়া হয়ে আছেন সরকারের খেয়াল-খুশির শিকার।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে-দু’টি মামলার রায় হয়েছে সে দু’টি রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা আছে। তার অর্থ হলো মামলা দু’টি এখনো বিচারাধীন এবং চূড়ান্ত রায় এখনো হয়নি। ন্যায়বিচারের দাবি হচ্ছে, চূড়ান্ত রায় হবার আগ পর্যন্ত জামিনযোগ্য মামলায় আসামীকে জামিন দেয়া। কিন্তু জামিন মঞ্জুর না করে চূড়ান্ত রায়ের আগেই তাকে কারাগারে ঢোকানো হয়েছে। এটাই অবিচার এবং তিনি অবিচারের শিকার হয়েছেন। দেশে সুবিচার থাকলে এমনটা ঘটতে পারতো না।

বাংলাদেশে এখন সরকারের ইচ্ছের বাইরে গিয়ে স্বাধীন ভাবে বিচার পরিচালনার সুযোগ বিচার বিভাগের আছে কিনা তা এক বিরাট প্রশ্ন। তারপরেও যুক্তির খাতিরে ধরে নিই, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যদি ওই দুই মামলায় চূড়ান্ত বিচারে খালেদা জিয়াকে নির্দোষ বলে রায় দেয় তখন কী হবে? তখন কি তিনি ইতোমধ্যে তিনি যে জেল খেটে ফেলছেন তা’ কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে?

আদালত থেকে জামিন পেলে খালেদা জিয়া স্বাভাবিক কিছু অধিকার ভোগ করতেন। তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারতেন। এর আগেও জামিনে থাকতে তিনি বিদেশে গেছেন এবং ফিরেছেন। কিন্তু জামিন না দিয়ে নির্বাহী আদেশে তাঁকে বাসায় থাকার বন্দোবস্ত করে বেগম জিয়ার স্বাভাবিক অধিকারকে আসলে সরকারের শর্ত ও ইচ্ছার অধীন করা হয়েছে। এ এক নিষ্ঠুর তামাশা।

ফখর-মঈনের এক-এগারো জামানায় দুই নেত্রী এমন বন্দীই ছিলেন জেলের বাইরে, সংসদ ভবন এলাকায় নির্ধারিত সরকারি বাড়িতে। এখন বেগম জিয়া নিজের ভাড়া বাসায় পুলিসি পাহারায় সরকারের ইচ্ছাধীন এক ধরণের অঘোষিত সাব জেলে আছেন। তিনি কোনোক্রমেই মুক্ত নন। আগে ছিলেন পরিত্যক্ত এক পুরানো জেল ভবনে। আর সেখানেই তিনি বিনা চিকিৎসায় বা অপচিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সরকার এর দায় এড়াতে এবং বন্দী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব তার নিজের ওপর ন্যস্ত করতেই নির্বাহী আদেশে বাসায় থাকার এ বন্দোবস্ত করেছে।

এক-এগারো জামানায় দায়ের করা মামলার মধ্যে এক নেত্রী ক্ষমতায় আসার পর সমস্ত মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন। অপর দিকে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা চলমান। তার ওপর নতুন আরো অনেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে যে দুই মামলায় নিম্ন আদালত থেকে সাজা দেয়া হয়েছে সে দুটি মামলা ও রায় নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। তারপর হাইকোর্টে সে রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ও দুদকের পক্ষ থেকে আপিল হয়। জজ সাহেব সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, তিনি খালেদা জিয়ার আপিল বিবেচনায় নেননি। দুদকের আপিল অনুযায়ী তিনি নিম্ন আদালতের সাজা আরো বাড়িয়ে দেন। এমন সব নজিরবিহীন কাণ্ডকে ‘বিচার’ বলে চালানো হলেও সিটিং চিফ জাস্টিসকে পর্যন্ত খেদিয়ে দেয়া জামানায় এগুলোর সব কিছুই আসলে পুরোপুরি জবরদস্তির কীর্তি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী সাজা দেয়া হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে তাকে রাখা হয় রাজধানী ঢাকার পুরোনো জেলে। কত সময়ে দেশে মহামারী ছড়িয়ে গেলে সরকার বিশেষ বিবেচনায় তাকে মুক্তি দেয় সাময়িক সময়ের জন্য। আর সেই থেকেই নিজ বাড়িতে রয়েছেন তিনি।

Related Articles

Back to top button