দৈনিক খবর

এবার অটোরিকশা চালিয়েও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাসুদ রানা

গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাধীন একমাত্র সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে উপজেলার নাগাইশ গ্রামের সানু মিয়ার ছোট ছেলে। সংসারের অভাব-অনটন। তাই বাবার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে পরিবারের ছোট ছেলে মাসুদ রানা চালিয়েছে রিকশা। রিকশা চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে অংশ নেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়।

বাবা-মাকে নিয়ে আটজনের পরিবার তার। বাবা সানু মিয়া মৎস্য ব্যবসা করতেন। ফাঁকে ফাঁকে বাড়ির পাশে একটা চায়ের দোকান চালাতেন। তাতেও তাদের সংসারের অভাব-অনটন যেন পিছু ছাড়ছে না। রাতে কিংবা মাঝে মাঝে রিকশা চালিয়ে উপার্জনের টাকা তুলে দিত বাবার হাতে। বাবার ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংসারের হাল ধরে মাসুদ রানা।

মাসুদ বলেন, আমরা গ্রামে বাস করতাম। সেখানে জাহিদুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করি। ব্যবসায় লোকসান বড় ভাইদের দেশের বাহিরে পাঠানোসহ বিভিন্ন সমস্যার পর রিকশা চালিয়ে বাবার একার পক্ষে সংসার চালানো, আমার ও ছোট বোনদের পড়ালেখা এবং পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

এদিকে, দুই ভাই বোনের লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। দিনে ক্লাশ করে সন্ধ্যায় রিকশা চালাতাম। রিকশা চালিয়ে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ ও নিজের ও ছোট বোনের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই স্যারেরা আমাকে বিভিন্ন পরার্মশ ও লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা দিতেন। আমার এই অর্জন সম্ভব হয়েছে শুধু আমার মা-বাবা ও ভাইসহ আমাদের কলেজের পিন্সিপাল স্যার ও জাহাঙ্গীর আলম এবং রুহুল আমিনসহ অন্যান্য স্যারের জন্য।

মাসুদ এর মা বলেন, আমার ছেলে অটো চালায়। অনেকেই তাকে অটো চালানো নিয়ে টিটকারী করতো। অনেক সময় সে কষ্ট পেতো। কিন্তু গরিব এর ঘরে জন্ম নিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে দেয় নাই। সে দোকানদারি, বাবার ব্যবসা ও অটো এবং পড়ালেখাসহ সব গুলো করতো। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে দোয়া চাই। আমার ছেলে অনেক কষ্ট করেছে। আমি এবং আমার পরিবার আমার এই ছেলেকে নিয়ে গর্ব করি।।

কলেজের অধ্যক্ষ খলিল উদ্দিন আখন্দ বলেন, আমাদের কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী মো. মাসুদ রানা ব্যবসায় শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সে নিয়মিত ক্লাসে উপস্হিতসহ অভ্যন্তরীণ সকল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেছিল। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে আরও ভালো ফলাফল করে এলাকার মুখ উজ্জ্বল করবে মাসুদ। কলেজের শিক্ষকমন্ডলীর সহযোগিতা এবং তার অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রম কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনের মূল নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে।

Related Articles

Back to top button